চা শ্রমিকদের যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণের আহ্বান টিআইবির
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ ও আইনসম্মত আন্দোলন ঠেকাতে হুমকির বদলে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সামান্য কিছু সুবিধাসহ দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে আট ঘণ্টা, কখনো আরও বেশি সময় কাজের বিপরীতে এই সামান্য পারিশ্রমিক বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি। চলমান সমস্যার সমাধানে বাগানের মালিকদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করতে হবে ও সরকারকে চা শ্রমিকদের দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে, ন্যায্য ও মানবিক উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে চাবাগান শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সম-খাতের সর্বনিম্ন মজুরি বিবেচনায় নিয়ে জীবনধারণের উপযুক্ত ও চা শ্রমিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য, যৌক্তিক পারিশ্রমিক নির্ধারণে বাগানমালিক ও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।
‘প্রতি দুইবছর পর চা শ্রমিক ও বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে মজুরি সংক্রান্ত চুক্তি নবায়নের রীতি রয়েছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মজুরি নির্ধারণে বাস্তবে একতরফাভাবে বাগান কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তথাপি গত ১৯ মাস ধরে চা শ্রমিকরা মজুরি চুক্তির বাইরে রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির এই সময় চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র ১৪ টাকা মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি অবজ্ঞা ও নিছক উপহাসমূলক অধিকার লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়।’
এ নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান বলছেন, সম্পূর্ণ বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী চা শ্রমিকদের প্রাপ্ত আবাসনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়েও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দেশের অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় চা শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ও বৈষম্যমূলক।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে চলমান আইনসম্মত আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবনের পাশাপাশি সমতাভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
টিআইবি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ‘চা বাগানের কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকার: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে চা শ্রমিকদের জীবন-মানের উন্নয়নে ন্যায্য ও অন্যখাতের সঙ্গে সমতাভিত্তিক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসহ বেশকিছু সুপারিশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান আন্দোলনের মানবিক সমাধানে সুপারিশসহ টিআইবি কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবমুখী।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে দেশের সব চা বাগানে শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে সেদিন সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়।
এইচএস/এমএইচআর/জেআইএম