বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি কে কোথায়?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২ খুনির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আর একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে জিম্বাবুয়েতে পলাতক থাকা অবস্থায়। বাকি পাঁচ খুনি এখনো পলাতক। নির্মম-নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ৪৬ বছর পার হয়ে গেলেও তারা রয়ে গেছেন অধরা। এই পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে তাতে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

এদের মধ্যে দুজনের অবস্থান জানা গেলেও বাকি তিনজন কোথায় আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ তিনজন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করছেন।

২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন। এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর হয় পাঁচ আসামির।

তারা হলেন- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।

অন্যদিকে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। সবশেষ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি হয়। ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার হন তিনি। এর পাঁচদিন পর ১২ এপ্রিল কার্যকর হয় তার ফাঁসি। তিনি দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন।

বাকি পাঁচ খুনির মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আর কানাডায় আছেন নূর চৌধুরী। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সফল হচ্ছে না সরকার। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব আইন।

এদিকে খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের কোনো সন্ধান নেই। তারা কোথায় আছেন তার সুনিশ্চিত তথ্য নেই সরকারের কাছে। যদিও তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা জারি রয়েছে।

তবে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, খন্দকার আবদুর রশিদ কখনো পাকিস্তান কখনো লিবিয়ায় অবস্থান করছেন। আর শরীফুল হক ডালিম রয়েছেন পাকিস্তানে। তবে এসব তথ্য যে পুরোপুরি নিশ্চিত তা বলা যাচ্ছে না।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

একই কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, পলাতক ঘাতকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে। আর আইনমন্ত্রী তো বলছেনই, একেক দেশের আইন একেক হওয়ায় আসামিদের ফিরিয়ে আনায় জটিলতা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কানাডা ও আমেরিকার আইন মেনে চেষ্টা করতে হবে আমাদের। এই সরকার আসার পর থেকেই ডিপ্লোমেটিক্যালি ঘাতকদের ফেরাতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে মাজেদ ধরা পড়েছে। আর বাকিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ইমিডিয়েটলি ব্যবস্থা করছেন বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এই আইনজীবী আরও বলেন, আসামিরা যে দেশে পালিয়ে আছেন বা বসবাস করছেন সুসম্পর্কের মাধ্যমে তাদের আনতে হবে। ভয়ভীতি বা ঝগড়ার কিছু না। তাদের বুঝাতে হবে যে একটা দেশের স্থপতিকে হত্যা করেছে। সেটা চিন্তা করে এবং গ্র্যাভিটি অব দ্যা অফেন্স, তাদের বিচার শেষ হয়েছে। বিচারে তারা সাজাপ্রাপ্ত। কী করে একটা দেশ আসামিদের আশ্রয় দেয়। যেটাই হোক আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে। আশা করি সফলতার দিকে যাবে।

তিনি বলেন, এছাড়া একটা ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সের বিষয় রয়েছে। এক সময় একেক দিকে মোড় নেয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খেলা চলে। সেই খেলাও দেখতে হবে।

সাবেক এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, মূলত দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দুই-তিনজনের তথ্য পাওয়া যায়। তার মধ্যে তারা কয়েকজন কানাডা ও আমেরিকায়। পলাতক না বসবাস করছেন বলা যায় না। বাকিরা কে কোথায় সেটারতো কোনো তথ্যও নেই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন।

ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, একমাত্র সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ আরও অনেককে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনিদের পরবর্তীকালে দূতাবাসে চাকরিসহ বিদেশে পুনর্বাসন করে তৎকালীন সামরিক সরকার।

শেষ পর্যন্ত এ হত্যা মামলায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল বিচার শেষে ১৫ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। তবে আপিলের রায়ে খালাস পান তিনজন। বাকি ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

সবশেষ ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। তাতে আসামিদের করা রিভিউ পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে গেলে পাঁচ খুনির ফাঁসির কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়।

এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।