সংস্কারকাজে ধীরগতি
দুই বছর বন্ধ গুলশানের ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক
দুই বছর আগে অবকাঠামো উন্নয়নে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়েছিল উত্তর সিটি। কথা ছিল দশ মাসের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু প্রায় ২৫ মাস পরও শেষ হয়নি কাজ। পার্কটির চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ফলে প্রাতঃভ্রমণে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভও করেছেন স্থানীয়রা। লাভ হয়নি তাতেও।
এ চিত্র রাজধানীর গুলশান এলাকার শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের। ‘উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঢাকা শহরে এমনিতেই পার্ক-খেলার মাঠের সংখ্যা কম। এরপরও সংস্কারের নামে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে শিশু-কিশোররা আনন্দ-বিনোদনের জায়গা পাচ্ছে না। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে ঠিকাদারের দাবি, ২০২০ সালে কার্যাদেশ দেওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির কারণে পার্কটির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়া যে পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছিল, পরবর্তীসময়ে তা বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। তাই সংস্কারকাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। কাজ শেষ হলেই পার্কটি নাগরিকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
গুলশান শুটিং ফেডারেশনের উল্টো পাশে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কটির প্রধান ফটকসহ চারপাশ সবুজ টিনে ঘেরা। ভেতরেও চারপাশে সীমানা প্রাচীরের খুঁটি, চলাচলের পথে টাইলস বসাচ্ছেন শ্রমিকরা। উত্তর পাশে বড় একটি ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। পশ্চিম পাশে ছোট্ট পুকুর তৈরি করতে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে যন্ত্রপাতি ও মালামাল। ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এমন চিত্র চলছে দীর্ঘদিন ধরেই।
পার্কটি খুলে দেওয়ার দাবিতে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানববন্ধন করেছিলেন গুলশান, বাড্ডা ও নিকেতন এলাকার বাসিন্দারা। ওই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন দক্ষিণ বাড্ডার পারভেজ হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগে প্রতিদিন সকাল-বিকেল হাজারো মানুষ এই পার্কে বেড়াতে যেত। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা। কিন্তু দুই বছর ধরে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, পার্কের অবকাঠামো উন্নয়ন হোক, এটা সবাই চায়। কিন্তু এজন্য বছরের পর বছর পার্কটি বন্ধ রাখার কোনো মানে হয় না। দ্রুত কাজ শেষ করে এটি জনগণের জন্য খুলে দিতে হবে।
অবকাঠামো উন্নয়নের নামে পার্কটি বন্ধ রাখায় সোমবার (৭ আগস্ট) ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বেসরকারি গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
সিনিয়র এই সাংবাদিক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গুলশান এক নম্বরে শুটিং ফেডারেশনের উল্টা দিকের ডা. ফজলে রাব্বি পার্কটি সংস্কারের নামে ধ্বংস করে রেখেছে। ২০২০ সালে করোনা আসার পরপরই এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর খোলার নাম নাই। গুলশান-বনানীর বাকি পার্কগুলো ঠিকই সংস্কার করে খুলে দেওয়া হয়েছে, শুধু এই পার্কটি খুলছে না। এর কারণ কী এই যে, একাত্তরের একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে এই পার্কটি?’
পার্কটির অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম আর কনস্ট্রাকশন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী এম ডি ফিরোজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, পার্কটিতে প্রচুর গাছ রয়েছে। যথাসম্ভব গাছগুলো রক্ষা করেই পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। এতে কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে সব কাজ শেষ করতে আরও মাস তিনেক সময় লাগবে।
তিনি বলেন, পার্কটিতে হাঁটাচলার জন্য ওয়াকওয়ে, সাইকেল ট্র্যাক, ফোয়ারা, শিশুদের খেলনা, শরীরচর্চার জন্য যন্ত্রপাতি, নারীদের বসার আলাদা স্থান নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া পার্কটিতে আরও গাছ লাগানোর পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন, উন্নত টয়লেট নির্মাণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। আর বাইরে থেকে যাতে পার্কটি দৃশ্যমান হয় এবং শব্দ না আসে সেজন্য চারপাশে ১৫ ফুট উঁচু প্লাস্টিকের স্বচ্ছ দেওয়াল বসানো হচ্ছে।
ঠিকাদার মো. শাজাহান দাবি করেন, এই প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ। তারা বারবার নকশা পরিবর্তন করায় কাজ অনেকটা পিছিয়ে গেছে। বাকি কাজ শেষ করতে দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। এরপর পার্কটি ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেবো।
ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, গুলশান-১ নম্বরের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক সংস্কারে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। এজন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০২১ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এখন পার্কটির গড়ে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ।
এই পার্কের প্রকল্প পরিচালক ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) তার মোবাইল নম্বরে কল দিলে তিনি এ বিষয়ে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, পার্কটির সংস্কারকাজ শেষ পর্যায়ে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পার্কটি নাগরিকদের জন্য খুলে দেবে ডিএনসিসি।
এমএমএ/এমএইচআর/এএসএ/জিকেএস