বঙ্গবন্ধুর ২ খুনি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি নেই, হদিস নেই তিনজনের

সিরাজুজ্জামান
সিরাজুজ্জামান সিরাজুজ্জামান , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১১ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২২
বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জন্য একটি কালো অধ্যায়। এদিন সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নির্মম-নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর ৪৬ বছর পার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ খুনির মধ্যে দণ্ড কার্যকর হয়েছে ছয়জনের। একজনের হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যু। বাকি পাঁচ খুনি এখনো অধরা। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নেই কোনো অগ্রগতি।

আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর অবস্থান নিশ্চিত করা গেলেও অন্যরা কোথায় আছেন তাও জানতে পারেনি সরকার। ওই দুজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা চালানো হলেও তেমন কোনো কাজ হয়নি।

রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সফল হচ্ছে না সরকার। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব আইন।

আর যে ঘাতকদের সন্ধান এখনো মেলেনি তারা হলেন আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিন।

২০১০ সালে এই ১২ খুনিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যে ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে আজিজ পাশার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর ১০ বছর পর ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ভোরে গ্রেফতার করা হয় মাজেদকে। ওই বছরের ১২ এপ্রিল কার্যকর করা হয় তার ফাঁসি।

এদিকে বাকি পাঁচ খুনির বিষয়ে কোনো আশার খবর দিতে পারেনি সরকার। এমনকি গত ১৮-২১ মে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল। সে সময়ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদকে ফিরিয়ে আনার জন্য বৈঠক করে কমিটি। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি।

ওই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। সদস্য ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ।

jagonews24

এরপর ১০ আগস্ট সংসদ ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে বলা হয়, খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তৎপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে বাংলাদেশ যে কোনো দেশের প্রাপ্য সর্বোচ্চ সম্মান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডাও তার ব্যতিক্রম নয়।

এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও দেশটির বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতা সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন সভায় বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত উপায়ে উপস্থাপন করেন। এটা যে বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি তা বোঝাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।

এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও জানানো হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ, বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্ব সংলাপ, বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপেও বিষয়টি উঠে আসে।

একই সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকেনের চলতি বছরের (২০২২) ৪ এপ্রিল দ্বিপাক্ষিক সংলাপেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

jagonews24

সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন ডিসিতে যে সফর করে, সেখানেও সিনেটর টেড ক্রুজ (রিপাবলিকান-টেক্সাস), কংগ্রেসম্যান স্টিভশ্যাবট (রিপাবলিকান-ওহাইও) এবং কংগ্রেসম্যান ডোয়াইটইভান্সের (ডেমোক্র্যাট-পেনসিলভানিয়া) সঙ্গে বৈঠক করেন কমিটির সদস্যরা।

তারা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু’র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সব বৈঠকেই খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আলোচনা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, সিনেটর টেড ক্রুজ মামলার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বিশদ তথ্য চেয়েছেন। এরই মধ্যে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য সরবরাহ করেছে।

এছাড়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয়, মধ্য-এশিয়া এবং নন-প্রলিফারেশন বিষয়ক ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাব-কমিটির র‌্যাঙ্কিং সদস্য ও কংগ্রেসম্যান স্টিভশ্যাবট জানান, তিনি বিচার বিভাগের হাউজ কমিটিতে রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি উত্থাপন করবেন। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব টেস্ট অ্যাম্বাসেডর ডোনাল্ড লু জানান, তিনিও এ বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে কথা বলবেন।

খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আশাবাদী তাড়াতাড়ি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করা সংসদীয় কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তেমন সুবিধার মনে হয়নি। কানাডা তো কোনো সাড়াই দিচ্ছে না। শেখ হাসিনার সরকার এই ঘাতককে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করলেও এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব আইন।

এইচএস/জেডএইচ/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।