জাবিতে পোষ্য কোটায় অতিরিক্ত ভর্তিতে শিক্ষকদের অসন্তোষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা না করেই পোষ্য কোটায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় অসন্তোষ জানিয়েছেন বিভাগটির শিক্ষকরা।
গত ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি সাহাব এনাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগের এক জরুরি সভায় এ অসন্তোষ জানিয়ে বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত পোষ্য কোটায় ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পোষ্যদের ভর্তির জন্য গত ২৫ জানুয়ারি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ‘জাবি/রেজি/শিক্ষা/৬৮১৬(১৫০)’ নং স্মারকের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি বিভাগে ৬৮জন পোষ্যকে ভর্তির জন্য বলা হয়েছে। এদের মধ্যে আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগেই কেবল ১৭ জন পোষ্যকে ভর্তি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
কার্যবিবরণীতে আরো বলা হয়, বিভাগের অবকাঠামো ও শ্রেণি কক্ষের পরিধির কথা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ ৫ জন পোষ্যকে সুযোগ দেয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে পোষ্য ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিভাগে পোষ্য কোটায় ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটা ছাড়াই ওই বিভাগে ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে বলে জানান বিভাগের শিক্ষকরা। অথচ বিভাগের ৫টি শ্রেণিকক্ষে গড়ে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী বসার ব্যবস্থা আছে।
এমতাবস্থায় বিভাগের পক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট শিক্ষা সহায়তা প্রদান এবং বিভাগের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করবে বলে শিক্ষকরা জানান।
আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ হেল কাফী, সহযোগী অধ্যাপক মিসেস নুসরাত জাহান ও ড. মো. খালিদ কুদ্দুস, সহকারী অধ্যাপক মো. রাশেদুল ইসলাম রাসেল, মুহাম্মদ মঈনুল হাসনাত, আলী আকবর, রনি বসাক ও মো. আজমল মাহমুদ খান এবং প্রভাষক মো. জান্নাতুল হাবীব ও ফারজানা আফরোজ প্রমুখ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানকে ভর্তি করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে অবগত না করেই অতিরিক্ত এসব পোষ্যদের ভর্তি করা হয়েছে।
আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগ ছাড়াও এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকটি বিভাগেও পোষ্য ভর্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব বিভাগের মধ্যে- ইতিহাস বিভাগে ৯জন, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) তে ৮ জন, দর্শন বিভাগে ৭ জন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও অর্থনীতি বিভাগে ৫ জন করে, একাউন্টিং ও ফার্মেসি বিভাগে ৩ জন করে, ইংরেজি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে ২ জন করে এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিংয়ারিং (সিএসই), সরকার ও রাজনীতি, চারুকলা, মাইক্রোবায়োলজি, প্রাণরসায়ন, আইন বিভাগে একজন করে পোষ্য ভর্তি করতে বলা হয়েছে।
পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়ে যোগাযোগ করলে কোটায় ভর্তির নির্দেশ পাওয়া অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষকেরাই জানান, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই বিভাগের অবকাঠামোগত এবং শিক্ষার পরিবেশ বিবেচনা না করে পোষ্যদের অতিরিক্ত সংখ্যায় ভর্তির এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে এভাবে পোষ্য ভর্তি করায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, এমনিতেই অধিকাংশ পোষ্যরা ক্লাসে অনিয়মিত ও অমনোযোগী হওয়ায় তাদের কারণে ক্লাসের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। আর এই সংখ্যা যদি দশের অধিক হয় তাহলে আমি বলবো বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে এটাকে পোষ্য বিভাগ ঘোষণা করা হোক।
হাফিজুর রহমান/এসকেডি