বিস্তর অভিযোগ, তবু আসছে ২০ কোটি টাকা
দেশের একমাত্র বন গবেষণা ইন্সটিটিউটটি অবস্থিত চট্টগ্রামের ষোলশহরে। এ ইন্সটিটিউটের কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। অভিযোগগুলো মূলত গবেষণার নামে প্রকল্পের টাকা লুটপাটের। আগে উত্থাপিত বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে সুরাহা না হলেও এ ইন্সটিটিউট নতুন একটি গবেষণার জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে। যে প্রকল্প ঘিরে এমন আয়োজন চলছে সেই প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে- আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। এ প্রকল্প এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ড. শাহীন আক্তার।
আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। আর ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। নীলফামারির ডোমারে বনবিভাগের দুই একর সরকারি জমির উপর বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি। কথা রয়েছে, গবেষণা কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হবে ছয়তলা একটি ভবন।
বাংলাদেশে নানা ক্ষেত্রে গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না- প্রায় সময়ই গবেষকরা এমন অভিযোগ করে আসলেও বন গবেষণা ইন্সটিটিউট গবেষণার জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে; যদিও প্রতিষ্ঠার পর গত ৫৯ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরপরেও নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন গবেষণা প্রকল্প। গৃহীত এসব প্রকল্পের টাকা উন্নয়ন বা গবেষণার নামে হরিলুট করা ছাড়া দৃশ্যত কোনো কাজ পরিলক্ষিত হয় না। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন পাবর্ত্য জেলায় বাঁশ পাতা চাষ প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি কোনো সুফল বয়ে আনেনি।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব গত বছরের ১১ নভেম্বর গবেষণা ইন্সটিটিউটে এক ঝটিকা সফরে প্রতিষ্ঠানটির নানা অপকর্ম দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. শাহিন আক্তারের কাছে প্রতিষ্ঠানটির গত পাঁচ বছরের উল্লেখযোগ্য গবেষণা সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কেবল বাঁশের কিছু ফার্নিচার তৈরির বিষয়টি ছাড়া আর কিছু দেখাতে পারেননি।
এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গবেষণার টাকা হরিলুটের অভিযোগ তো রয়েছেই, তার সঙ্গে এমন অভিযোগও রয়েছে যে- চাকরি না করেও মাস শেষে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমগুলো সরব হলে কিছুটা নড়েচড়ে বসেন ঊর্ধ্বতনরা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে গরমিল, নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, নিয়োগ কমিটির ছাড়পত্রের মেয়াদ না থাকা, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। তারপরও নিয়োগ আদেশ পেতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন কথিত নিয়োগ কমিটির সদস্য রফিকুর ইসলামসহ অন্যরা।
এ প্রতিষ্ঠানের অনেক পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জালিয়াতির।
১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বন গবেষণা ইন্সটিটিউটের নানা অনিয়মের বিষয় সবারই জানা থাকলেও সিবিএ-এর কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তারা মান-সম্মানের ভয়ে ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক শাহীন আক্তার ও বিভাগীয় কর্মকর্তা (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম।
সব মিলিয়ে এ প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৭শর মতো লোকবল থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনও রয়ে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা কিংবা বনায়নের উন্নয়নে কী ধরনের কাজ করে তাও সাধারণ মানুষের কাছে অজানা।
গত বছরে বন গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকার বেশিরভাগই কর্মকর্তারা রক্ষণাবেক্ষণ কাজ না করেই নিজেদের পকেটে পুরেছেন। আর এ নিয়ে গত ৯ জুন প্রতিষ্ঠানটির মাসিক সভায় কতিপয় কর্মকর্তার মধ্যে হাতাহাতি এমনকি জুতা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা খুরশিদা আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল গত পাঁচ বা দশ বছরে কী গবেষণা বা নতুন কি উদ্ভিদ উদ্ভাবন করেছে বন গবেষণা ইন্সটিটিউট। জবাবে তিনি বহুদিনের পুরোনো বাঁশের সোফা সেট দেখিয়ে বলেন, এটিই নতুন গবেষণা।
এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বেতন উত্তোলন, অফিস চলাকালীন সময়ে অফিস না করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে ব্যবসা করার মতো অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা প্রশাসন মো. রফিকুল ইসলাম ও বিভাগীয় কর্মকর্তা (বীজ বাগান) হাসিনা মরিয়মের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানান, এ অভিযোগগুলোর বিষয়ে তাদের জানাই ছিল না। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন এ দুই কর্মকর্তা।
জীবন মুছা/এনএফ/এমএস