জানুয়ারিতে নারী নির্যাতন ও শিশু অপহরণ বেড়েছে


প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিশু অপহরণ,যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতন, হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার  (বিএমবিএস) কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা ফাতেমা ইয়াসমিনের স্বাক্ষরিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করে সংস্থাটি।        

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা আর নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে বছরকে বরণ করেছে মানুষ। কিন্তু বছরের প্রথম মাসেই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আহত বা নিহত হয়েছে ২ হাজার ৫৯২ জন পুরুষ নারী ও শিশু।

জানুয়ারির পুরো মাস জুড়েই ছিল পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহতের নানা ন্যক্কারজনক ঘটনা। গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্তৃক নিরীহ মানুষ হত্যা। দেশের রাজনৈতিক অবক্ষয়ের সঙ্গে মানুষের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়েরও স্থলন ঘটেছে মারাত্মকভাবে ।
   
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জানুয়ারি মাসের মনিটরিং থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যা জাগো নিউজ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো;

যৌতুক : জানুয়ারি মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে ৫ নারীকে এবং মারাত্মক আহত হন ৯ জন । মুন্সিগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে বোতল দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এক স্বামী। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য আহত ও নিহতের সংখ্যা বেশি ঘটে ঢাকায়, মোট ৬ জন, এর মধ্যে আহত ৩, এবং নিহত হন ৩ জন। তাছাড়া রাজশাহীতে নিহত হন ২ জন।

পারিবারিক কলহ : চলতি মাসে বেশ কিছু পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অলোচিত হয়েছে। পারিবারিক কলহে চলতি মাসে নিহত হয় ২৫ জন ও আহত হয় ১২ জন। পারিবারিক কলহের জের ধরে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যাক্তি নিজের ভাই-বোনের তিন সন্তানকে পুড়িয়ে মারে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে পারিবারিক কলহের কারণে একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যা করে এক ব্যাক্তি।

ধর্ষণ : জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয় ৪ জন ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় একজনকে। এই মাসে এক শিশু ধর্ষিত হয়। নোয়াখালীতে একসঙ্গে দুই বোন গণধর্ষণের শিকার হয়। নান্দাইলে বাসে চালক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় এক নারী।

ক্রস ফায়ারে নিহত : গত মাসে কথিত ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৬ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৪ জন , র্যাব কর্তৃক একজন ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক একজন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয় একজনের।

আত্মহত্যা : চলতি মাসে আত্মহত্যা করেছে ৭ জন পুরুষ ও ২৬ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকাতেই আত্মহত্যা করে ১৪ জন নারী। বাকি ঘটনাগুলো ঘটে বারিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ও যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

খুন : সারা দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৬৭ জন ও আহত হয় ৭৩ জন। তুচ্ছ ঘটনায় খুনের ঘটনা বেড়েছে অনেক। ১১ জানুয়ারি প্রাইভেটকার ভাড়া করে গ্রামের বাড়ি গিয়ে টাকা না দিয়ে চালককে হত্যা করে পালায় তিন যুবক। কেরানীগঞ্জে হিন্দুদের এক মেলায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ঝন্টু দাস নামে এক যুবক নিহত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কর্তৃক হতাহতের সংখ্যা বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনা : সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, অদক্ষ চালক, পরিবহন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ১৬৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে, অহত হয়েছে ৫৬৮ জন। ১০ জানুয়ারি ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ভূমি মন্ত্রীর ছেলেসহ নিহত হন ৭ জন। এই ঘটনায় আহত হন সাংবাদিকসহ ৪৬ জন।

সামাজিক অসন্তোষ : বিচার ব্যবস্থার অবনতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারণের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারণে বেড়েছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৫৭ জন। এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে জমি জমা সংক্রান্ত কারণে।

রাজনৈতিক সহিংসতা : রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছে ১৭৪ জন ও নিহত হয়েছে ৪ জন। বেড়েছে রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলে আহতের সংখ্যা । বিগত পৌর নির্বাচন, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার বাণিজ্য, এলাকা দখল, চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের জন্য আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে আহত ১৭৫ জন বিএনপির অন্তঃকোন্দলে আহত হন ৩০ জন।

তাছাড়া মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে আহত হয়েছে ১২ জন ও নিহতের সংখ্যা ৯ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে  মৃত্যুবরণ করে ৫৪ জন। এ মাসে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ২ জনের। চলতি মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে গণগ্রেফতার হয়েছে ৬৩২ জনেরও বেশি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে বিদ্যমান মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

সংস্থাটি আরো মনে করে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি মানবিক আচরণ করার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা উপরোউক্ত তথ্যাদি জানুয়ারি মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এর বাইরেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা থাকতে পারে যা সীমাবদ্ধতার কারণে সংগ্রহ করা হয়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এফএইচ/এসকেডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।