ফলাফল প্রকাশের পরও বাতিলের ক্ষমতা পেতে ইসির খসড়া আইন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বেশকিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর খসড়া তৈরির পর রোববার (৭ আগস্ট) এটি কমিশন বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। বিদ্যমান আইনে ভোটের সময় কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রস্তাবিত আইনে ভোটের সময়ের পর থেকে ফলাফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের আগে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ের অভিযোগ কমিশন তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট বাতিল করতে পারবে। এজন্য ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) এটির খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
জানা যায়, এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে কিছু সুপারিশ এবং কমিশনের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু প্রস্তাব এই খসড়ায় রাখা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে অশোক কুমার দেবনাথ জাগো নিউজকে বলেন, খসড়া আইনটি আজ (সোমবার) আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর এটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। এরপর সংসদে সংশোধনীটি পাস হবে।
প্রস্তাবিত খসড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এক ডজন ছোটেখাটো সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। নির্বাচন নিয়ে যে কোনো পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে ভোট বাতিল, নির্বাচনী কাজে অবৈধভাবে বাধা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যোগসাজশ এবং পোলিং এজেন্টদের ভীতি প্রদর্শন বা বাধার ঘটনা ঘটলে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়াসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। সরকার চাইলে আইন সংশোধন হতে পারে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, নির্বাচনের যে কোনো মুহূর্তে পেশিশক্তি বা অন্যবিধ যে কোনো কারণে নির্বাচন বন্ধ বা বাতিলের জন্য এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধির অধীনে কারও প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন নতুন করে ওই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্যও প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনী কাজে বাধা দিলে বা বাধার চেষ্টা করলে শাস্তির আওতায় আনতে ৪৪ অনুচ্ছেদে উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান আইনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধান রয়েছে। এটি ২০২০ সালের মধ্যে হওয়া কথা ছিল। কিন্তু কোনো দলই তা প্রতিপালন করতে পারেনি। তাই দলগুলো আরও সময় চেয়েছে। কোনো ইসলাম ভিত্তিক দল এই নিয়মটি তুলে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দিতে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমার সময় এক বছর থেকে কমিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে জমার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, সংলাপে আসা বিভিন্ন সুপারিশও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যতটুকু সংশোধনী আনা প্রয়োজন বলে ইসি মনে করেছে ততটুকু সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে দিয়েছে। এজন্য তারা ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত কোনো সংলাপে অংশ নেয়নি।
এইচএস/আরএডি/এএসএম