ডাকাত ও ছিনতাই আতঙ্কে ফতুল্লাবাসী


প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ছিনতাই আর ডাকাত আতঙ্কে ভুগছে জনসাধারণ। প্রতিনিয়ত ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কে জীবন যাপন করছে ফতুল্লাবাসী। তবে একের পর এক ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে না পারায় বন্ধ হচ্ছে না এসব ঘটনা।

অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লায় একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড হলেও পুলিশ চি‎হ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের গ্রেফতার না করে ছিঁচকে চোর বা ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইওয়াশ করছেন। আর কিছু ছিঁচকে ছিনতাইকারীকে ডাকাত বানিয়ে কৃতিত্ব দেখানোর অপচেষ্টা করছে পুলিশ। ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে ফতুল্লাবাসী। তবে চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা এলাকায় প্রকাশ্যে থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এসব অপরাধী এলাকায় অবস্থান করায় বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর পুলিশকে বলতে গেলে বলেন অপরাধ ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না।  

ফতুল্লাবাসীর অভিযোগ প্রকৃত ছিনতাইকারীও ডাকাতদের আড়াল করতেই পুলিশ ওই সকল ছিঁচকে চোরদের গ্রেফতার করে নিজেদের কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টা করছেন। অথচ থানার তালিকাভূক্ত চি‎হ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের নাকের ডগার সামনে দিয়ে বীরদর্পে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। এ কারণে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ডাকাত আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারছেনা। তাদের ধারনা চি‎হ্নিত এসব ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা না হলে যেকোনো সময় আবারও বড় ধরনের ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছে ফতুল্লাবাসী।

জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি ফতুল্লা স্টেডিয়ামের পাশে নির্মাণাধীন পার্কের সামনে থেকে সিংগাপুর প্রবাসী জামতলা এলাকার আ. হামিদের ছেলে শাহ আলম ও আমিনুলকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিআরটিসি এসি বাস থামায়। পরে ছিনতাইকারীরা তাদের মাইক্রো বাসে তুলে নেয়। তাদের কাছে থাকা ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও সিংগাপুর রিয়েল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তাদের জালকুড়িতে ফেলে চলে যায় ছিনতাইকারীরা।

২৭ জানুয়ারি দেলপাড়ার মনিরের বাড়িতে ১০/১২ জনের মুখোশধারী ডাকাতদল বাড়ির মেইন গেইটের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে মনিরের পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ঘরে আলমিরা ভেঙে ১০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এসময় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাত দলের সদস্যরা। এঘটনায় মনির থানায় একটি অভিযোগ করলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যায়নি।

২৫ জানুয়ারি ফতুল্লার মাসদাইর এলাকায় ছিনতাই করার সময় জনতা কর্তৃক মিল্টন নামের এক ছিনতাইকারীকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ৭ টায় মাসদাইর এলাকায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সনাতন মণ্ডলের কাছ থেকে ছিনতাইকালে তাকে আটক করে। তিনি বিসিকের ফকিরা গার্মেন্ট থেকে মাল কিনে রিকসাযোগে চাষাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় ছিনতাকারী মিল্টনসহ আরো ২/৩ জন চাকু ঠেকিয়ে তার পথরোধ করে সঙ্গে থাকা ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় ফতুল্লা পঞ্চবটি গুলশান রোডে ফার্নিচার ব্যাবসায়ী মিলন প্রধান ও হান্নান প্রাধান নামে দুই ভাইকে গুলি করে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময় এলাকাবাসী রিলভারসহ দুই সহোদর ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেছে।

৫ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে অবস্থিত প্রিমিয়ার সিমেন্ট ফ্যাক্টরির মাইক্রোবাস চালককে গুলি ও আরো দুই কর্মকর্তাকে কুপিয়ে ২৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। ঢাকা-পঞ্চবটি-মুন্সিগঞ্জ সড়কের কাশিপুর দেওয়ান বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় মামলা দায়ের করলেও ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে ডাকাত সেন্টু কাজীকে গ্রেফতার করলেও তার কাছ থেকে কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে পুলিশের খাতায় যারা চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও ডাকাত হিসেবে পরিচিত তাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন, চাষাড়ার তামিম, ফতুল্লার শহিদুল্লাহ, মোতালেব, আলীগঞ্জের কিলার মতি, কিলার ফারুক, ইদু, মকবুল, লুৎফর, দেলপাড়ার পলাশ, নন্দলালপুর এলাকার রনি, শাহাবউদ্দিন, মাসুদ, রাজা ওরফে লিটন, সুলতান, ইয়াকুব, জিয়া। পিলকুনি শাহিন, গাল কাটা আক্তার, নয়ন, আসলাম, হালিম, লালখাঁ’র ডাকাত রতন, শাহাবুদ্দিন, মিঠু, রেলস্টেশনের ডাকাত শাহিন, কবির হোসেন ফেলা (কারাগারে) বোমা লিপু (কারাগারে) আমির হোসেন পিচ্ছি, গাল কাটা সোহেল, দ্বীন ইসলাম, রাঙ্গা বাবুল, ডাকাত রনি, শাওন, রকিম, মোহন, হানিফ, লতিফ, ছোট মিঠু ও সবুজ।

পঞ্চবটির ফরহাদ, মিন্টু, সোহেল,পাগলা ইউসুফ, দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার ডাকাত আমিন ওরফে কাইল্লা আমিন, ইয়াছিন, শহিদ হোসেন, ভাগিনা টুটুল, সুমন, উজ্জল, টিকিমরা লিটন, রুহুল ও শুক্কুর। হাজীগঞ্জ এলাকার সিলেটি বাবু, মাস্টার দেলু, রনি, সাইদুর, সোহেল, মোল্লা সোহেল। তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে অপকর্ম করে যাচ্ছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে উপরোক্ত ডাকাতদের সঙ্গে থানার একাধিক দারোগার গভীর সখ্যতা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত বিশেষ সুবিধা ভোগের কারণে অধিকাংশ সময় পুলিশ তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা চালাতে দেখা যায় এমনই অভিযোগ ফতুল্লাবাসীর।    

ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে জানান, ফতুল্লায় আগের চেয়ে ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা ঘটছে না। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে এবং অভিযান অব্যাহত রাখছে। আর যারা ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বেশির ভাগ লোককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

শাহাদাত হোসেন/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।