পাঁচ কনটেইনার মদ জব্দের ঘটনায় কাস্টমসের ৫ মামলা
আইপি জালিয়াতি করে আমদানি করে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের না জানিয়ে বন্দর থেকে খালাস হয়ে যাওয়া সেই দুই কনটেইনার মদসহ পাঁচ কনটেইনার মদ জব্দের ঘটনায় পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানায় সোমবার (১ আগস্ট) তিনটি ও রোববার (৩১ জুলাই) অন্য মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এআইআর (অডিট, ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ) শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক।
সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জাগো নিউজকে বলেন, জব্দকৃত পাঁচ চালানের মধ্যে তিনটিতে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। ওই তিন চালানের মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়েছে।
অন্য যে দুটি চালানে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি তাতে শুধুমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়েছে। পাঁচটি মামলা কাস্টম হাউজের পৃথক পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) মামলার বাদি হন। এ সময় মামলায় ১৯৬৯ সালের কাস্টমস অ্যাক্ট- ১৯৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন, বাংলাদেশ পেনাল কোড ও ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ করা হয়।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২২ জুলাই (শুক্রবার) দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে জব্দ করা ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের জন্য আনা কন্টেইনারটিতে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য ছিল বলে জানানো হয়। পাশাপাশি কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের নামে আনা কনটেইনারটিতে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার পণ্য ছিল বলে জানানো হয়।
কিন্তু জব্দ করার পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে কনটেইনার দুটিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৩৩০ কার্টনে ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার মদ পাওয়া যায়। কাস্টমস কর্মকর্তারা কন্টেইনার দুটি থেকে জব্দ করা মদের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য পান ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চালান দুটিতে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে জানায়েছে কাস্টমস। প্রথমে জব্দ করা দুই কন্টেইনারে নিশ্চিতভাবে কমপক্ষে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাচার হয়েছে বলে ধারণা কাস্টমসের।
রোববার (২৪ জুলাই) সকালে নীলফামারী উত্তরা ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে টেক্সটাইল সুতার নামে আরও এক কনটেইনার মদ জব্দ করে কাস্টমস। এ চালানে ১৬ লাখ ৬ হাজার টাকার পণ্য আছে বলে দাবি করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে চালানটিতে ১ হাজার ৪৩০টি কার্টনে ১৫ হাজার ২০৪ লিটার মদ পাওয়া যায়।
নীলফামারী থেকে জব্দ করা মদের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। চালানটিতে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চালানটিতে কমপক্ষে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা পাচার হয়েছে বলে ধারণা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে, গত ২৫ জুলাই (সোমবার) বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ড থেকে জব্দ করা হয় আরও দুই কনটেইনার মদ। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে প্যাকেজিংয়ের উপকরণ ঘোষণায় একটি ও বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে টেক্সটাইল সুতার আরও দুটি চালান আসে।
আগের তিনটি চালান খালাসের জন্য বিএল অব এন্ট্রি সাবমিট করেছিলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স জাফর আহমদ। শেষের চালান দুটিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না হওয়ায় শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে কনটেইনার দুটিতে ২ হাজার ৮৫৮ কার্টনে ৩১ হাজার ৪৯২ দশমিক ৫ লিটার মদ ও ১০ লাখ ৬০ হাজার শলাকা আমদানি নিষিদ্ধ একাধিক বিদেশি ব্রান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়।
আটক হওয়া চালান দুটিতে কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্কায়নযোগ্য মূল্য পেয়েছেন ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চালান দুটিতে প্রায় ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। জব্দকৃত পাঁচটি মদের চালানে ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ২২ জুলাই রাতে দুই কনটেইনার মদ আটকের ঘটনায় তিনজনকে আটক করে র্যাব। ২৪ জুলাই রাতে আটক তিনজনসহ ১১ জনকে আসামি করে র্যাব-১১ এর উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় পৃথক আরেকটি মামলা করেন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকার আবদুল আহাদ (২২), তার দুই সহযোগী একই জেলার লৌহজং উপজেলার নাগেরহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম (৩৪) ও শ্রীনগরের ষোলঘর ভুইচিত্র এলাকার মো. নাজমুল মোল্লা (২৩)।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. আজিজুল ইসলাম (৫৭), মিজানুর রহমান আশিক (২৪), সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জাফর আহমেদ (৩৫), শামীম (৩২), রায়হান (৩৫), দিপু (২৮), বাদশা (৩২) ও অজ্ঞাতনামা এক দুবাই প্রবাসী।
ইকবাল হোসেন/এসএএইচ/কেএসআর