প্রাণবন্ত হোক প্রাণের মেলা
বাংলাদেশের সাহিত্যচর্চা অনেকাংশেই বইমেলা কেন্দ্রিক। দু-একজন ছাড়া বেশিরভাগ লেখক মেলাকে সামনে রেখেই পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। প্রায় সব লেখকেরই নতুন বই প্রকাশিত হয় মেলায়। ফলে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস লেখক-প্রকাশক-পাঠকের উদযাপনের মাস হয়ে ওঠে। আমরা যারা লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত, মাসটা সত্যি সত্যি আমরা উদযাপন করি।
সারা বছর মাসটির অপেক্ষায় থাকি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ফেব্রুয়ারি মানেই অন্যরকম আনন্দের একটি মাস। শুধু যে নতুন বই প্রকাশের আনন্দ, তা নয়। মেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে পরিচিত-অপরিচিত লেখকরা আসেন। তাদের সঙ্গে দেখা হয়, পরিচয় হয়, আড্ডা হয়। পরিচয় হয় নতুন নতুন পাঠকের সঙ্গেও। এবারের মেলায় প্রকাশিত হচ্ছে আমার দ্বিতীয় গল্পের বই ‘বালিহাঁসের ডাক’। প্রকাশ করছে অনিন্দ্য প্রকাশ। মেলার শুরু থেকেই বইটি পাওয়া যাবে।
প্রতি বছর বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রায় তিন হাজারের মতো নতুন বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের এই বিপুল প্রকাশ এবং মেলায় ক্রেতাদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় বাঙালি আসলেই বইপ্রেমী। তবে এ কথাও সত্য, রুচিশীল পাঠকের পড়ার মতো বই কিন্তু মেলায় খুব বেশি প্রকাশিত হয় না। প্রকাশকরা পাণ্ডুলিপি নির্বাচনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় খুব কমই দিয়ে থাকেন। আশা করছি, এ ক্ষেত্রে প্রকাশকরা এবার সচেতন হবেন। তবে এটি খুবই আনন্দের ব্যাপার যে, বইমেলা উপলক্ষ্যে বিদেশি সাহিত্যের অনেক ভালো ভালো বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতি বছর আমি প্রচুর অনূদিত বই সংগ্রহ করি। আশা করি এবারও ভালো ভালো অনূদিত বই পাব।
গত তিন বছর বইমেলার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত তিন বছর মেলা ঠিক জমেনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ছিল অবরোধ। ঢাকার বাইরের লেখক-পাঠকরা মেলায় যোগ দিতে পারেননি। এছাড়া মেলার মাঝামাঝি সময়ে ঠুনকো কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় একটি প্রকাশনীর স্টল।
শেষদিকে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হলেন একজন লেখক। ব্যক্তিগতভাবে আমিও নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হই। আশা করি এবারের মেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। বইমেলার নিরাপত্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করি যত্মবান হবেন। লেখক-পাঠক যাতে ভালোভাবে মেলায় যোগ দিতে পারেন সেই পরিবেশ বজায় থাকুক। বাঙালির এই প্রাণের মেলা হয়ে উঠুক প্রাণবন্ত।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
এইচআর/এমএস