ফসলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমানোর চিন্তা হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৭ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২২

ফসল ফলাতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমানোর চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সচিবালয়ে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান।

তিনি বলেন, এখন প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৬ টাকা। আর ডিএপি সারের দাম ১৬ টাকা। আমাদের ধারণা ছিলো আমাদের কৃষকরা খুব বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করে, ইউরিয়া দিলে গাছের পাতাগুলো সবুজ হয়, মনে হয় অনেক বেশি ফলন হবে। অনেক সময় এটার কাউন্টার প্রোডাকশন হয়, ফসল চিটা হয়ে যায়। দানাগুলো পুষ্ট হয় না। কার্বহাইড্রেড সোর্সগুলো এটা চলে যায় পাতার মধ্যে। তাই আমরা চাই ইউরিয়ার ব্যবহারটা কমুক।

‘কৃষকরা ডিএপি সার দিচ্ছে, এরমধ্যে ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন আছে। তাহলে ১৮ ভাগ ইউরিয়াতে কম দেয়ার কথা। সেটা দেয় না। ইউরিয়া দেয় আবার টিএসপি ও ডিএপিও দেয়। এজন্য আমরা গভীরভাবে চিন্তা করছি এটা কি করা যায়। আসলে ইউরিয়ার ব্যবহারটা কমাতে হবে। এ সব দিক দিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’

গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় দুটি সার কারখানা বন্ধ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আগামী বোরো পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ সারের সমস্যা হবে না। সমস্যা হলো দাম নিয়ে। অস্বাভাবিক দাম দিয়ে ৩০০/৩৫০ ডলার দামের প্রতি টন সার আমরা ১১০০/১২০০ ডলারে কিনছি। ২০০ ডলারেরও নিচের দামের ইউরিয়া কিনছি ৬০০/৭০০ ডলার দিয়ে। এটার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার উপর পড়ছে।

‘আমাদের আমদানি ৮১ বিলিয়ন ডলার, সেখানে আমরা রপ্তানি করছি, আয় করছি ৫২ বিলিয়ন ডলার। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়ছে। তা সত্ত্বেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা দেশে সারের সরবরাহ অব্যাহত রাখব। কোন ক্রমেই সার নিয়ে যেন কোন ঘাটতি না হয়।’

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয়

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক কথা আমরা বলতে পারি না। সেগুলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আপনাদের বলা দরকার। আমরা এত দাম দিয়ে সার কিনছি, এটা কি সঠিক? যারা উন্নত বিশ্ব যারা যুদ্ধে জড়িয়েছে, তারা কেন নিষেধাজ্ঞা দেবে? কেন সারের উপর, তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা আসবে? ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিদিন রাশিয়া থেকে গ্যাস নিচ্ছে গ্যাস নিয়ে তাদের শিল্প-কারখানা পরিচালনা করছে। জ্বালানির প্রয়োজন মেটাচ্ছে। আর আমাদের সার, যেটা প্রাথমিক একটা গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, সেটা আমরা পাচ্ছি না।’

‘তারা বলে রাশিয়াকে দিলে রাশিয়া এটা দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করে...রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করছে। গ্যাসের টাকাও তো রাশিয়া ব্যবহার করছে, সেটার কেন সমালোচনা নেই, সেটা নিয়ে কথা হয় না। তাদের বিবেক দিয়ে তাদের পরিচালিত হওয়া উচিত। তাদের যুদ্ধ করার দরকার তারা যুদ্ধ করুক এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কেন দেবে? অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয়। এতে স্বল্পোন্নত দেশগুলো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার যেন থাকে, এজন্য সর্বাত্মক কাজ করছে সরকার।’

ভর্তুকি অস্বাভাবিক বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সারের দাম বাড়ানোর কোন চিন্তা করছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করছেন যেন সারের দাম না বাড়ে। আমরা ৮-১০ হাজার কোটি টাকার জায়গায় সারে ২৮-২৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। বিশ্বব্যাংক চায় না এ ভর্তুকি দেয়া হোক। প্রধানমন্ত্রী এটার সঙ্গে সবসময় দ্বিমত পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে, সারের ভর্তুকিটা গ্রামের সাধারণ কৃষকরা পায়।’

আরএমএম/জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।