মিথ্যা তথ্যে মদ-সিগারেট আমদানি, ২০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা
চট্টগ্রাম বন্দরে একে একে বেরিয়ে আসছে মদের চালান। সোমবার সর্বশেষ দুই চালানে আইপি জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে মদ-সিগারেট আমদানির মাধ্যমে ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাস্টমসের এআইআর (অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ) শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক। এ নিয়ে একই কায়দায় আমদানি করা ৫ কনটেইনার মদ ও সিগারেট আমদানির মাধ্যমে ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়।
এর আগে সোমবার (২৫ জুলাই) বিকেলে কাস্টমসের এআইআর (অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ) ও পিসিইউ (পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট) শাখা কনটেইনার দুটি জব্দ করে। পরে বন্দরে এনসিটি টার্মিনালের সিএফএস ইয়ার্ডে কনটেইনার দুটি ইনভেন্ট্রি সম্পন্ন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে প্যাকেজিংয়ের উপকরণ ঘোষণায় একটি ও বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে টেক্সটাইল সুতা ঘোষণায় আরেক কনটেইনার মদ আমদানি করা হয়।
চালান দুটিতেই আইপি জালিয়াতি করা হয়। তবে দুই চালানেই বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি। ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে আসা কন্টেইনারটি ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। অন্যদিকে ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে আসা কন্টেইনারটি ২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।
ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, সর্বশেষ আটক দুই কনটেইনারে ২৮৫৮ কার্টনে ৩১ হাজার ৪৯২ দশমিক ৫ লিটার মদ পাওয়া যায়। পাশাপাশি ১০ লাখ ৬০ হাজার শলাকা বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট পাওয়া যায়। চালান দুটির আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৩ কোটি ৩৯ লাখ। এতে প্রায় ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব জাল জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে রোববার (২৪ জুলাই) সকালে সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা এক হাজার ৪৩০টি কার্টুনে ১৫ হাজার ২০৪ লিটার মদের চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চালানটিতে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়।
এর আগে একই কায়দায় আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মদ আমদানি করে চট্টগ্রাম বন্দরে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে দুইটি চালান বন্দর থেকে খালাস নেয় জালিয়াতি চক্র। গত শুক্রবার (২২ জুলাই) রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মদভর্তি দুটি লরির চালান আটকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় কাস্টমস। কিন্তু আটকের আগেই জালিয়াত চক্র সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মদভর্তি লরি দুটি খালাস করে বন্দর থেকে বের করে নেয় বলে জানতে পারে কাস্টমসের এআইআর (চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিজস্ব গোয়েন্দা) শাখা।
পরে র্যাবের সহযোগিতায় নারায়গঞ্জের সোনারগাঁও থেকে কনটেইনার দুটি আটক করা হয়। কনটেইনার দুটিতে ১৩৩০ কার্টনে ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়। চালান দুটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বৈধ উপায়ে আসলে এতে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব পেতো সরকার। পুরো রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চালান দুটি খালাস নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস। শেষের দুই চালানে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা না হলেও আগের তিন চালানের খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স জাফর আহমদ। এসব মদ আমদানির ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গত ২৩ জুলাই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ইকবাল হোসেন/এমআরএম/জিকেএস