ফার্মগেটে ভোগান্তির ফুট ওভারব্রিজ
রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম ফুট ওভারব্রিজটি ফার্মগেটে অবস্থিত। ৭ ফুট প্রশস্ত ব্রিজটির ৩ ফুট জায়গা হকার আর ভিক্ষুকদের দখলে। পুলিশের অভিযানেও দমানো যাচ্ছে না তাদের। বিচ্ছিন্নভাবে দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্রিজ দখল করে বসছে হকাররা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন রাজধানীর ফার্মগেট ফুট ওভারব্রিজ গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
ব্রিজে ওঠার শুরুতেই পথচারীদের দুর্ভোগ শুরু। ওভারব্রিজের দুটি সিঁড়ির মাঝেই বসে থাকে ভিক্ষুক। স্থানীয়রা জানান, দুই শিফটে দুজন ভিক্ষুক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে ভিক্ষা করেন। উপরে উঠতেই শুরু হয় হকারদের উৎপাত। ব্রিজের একপাশে কেউ ট্রাভেল এজেন্সির কার্ড বিলাচ্ছেন। কেউ আবার ৩০ টাকায় টুথ ব্রাশ বিক্রি করছেন।
ওভারব্রিজের তিনটি পয়েন্টে ওজন মাপার মেশিন নিয়ে বসেছে হকাররা। বিক্রি হচ্ছে মোজা, চাবির রিং, সুপার গ্লুসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র। দুপাশের সিঁড়ির গোড়ায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় দুজন মাদকাসক্তকে।
এসব কারণে নিয়মিত অসুবিধা হচ্ছে পথচারীদের। ফার্মগেটের সড়কটি পারাপারের জন্য কোনো কাটা জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে এই ওভারব্রিজটি দিয়েই চলতে হচ্ছে তাদের। তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী জোনায়েদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কলেজ শেষে বাসায় ফেরার সময় ব্রিজে হাঁটা প্রায় মুশকিল হয়ে পড়ে। হকারদের কারণে পথচারীদের গায়ে গায়ে বাড়ি খায়। মাঝে মাঝে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দিলেও আবার তারা বসে যায়।’
ফার্মগেটের ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের সংবাদ পেলে আগেভাগেই চলে যায় হকাররা। ২-১ দিন পর আবার ব্রিজ দখল করে।
এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজধানীর ফুট ওভারব্রিজগুলো দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যেই অভিযান শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকবার ফার্মগেটেও এই অভিযান চলেছে। তবে পর্যাপ্ত ফলোআপের অভাবে তারা ব্রিজটি বার বার দখল করছে।’
তাইজুল নামে ফার্মগেট সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী জানান, রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নেতারা চাঁদা নিয়ে ব্রিজটিতে হকারদের বসার অনুমতি দেন। এর একটি অংশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার পকেটে যায়। দোকান প্রতি চাঁদার হার দৈনিক একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা।
চাঁদার বিষয়ে ব্রিজের হকার সাদেক আলী নামের এক হকারের কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘ব্রিজে বসতে হলেতো ভাড়া দিতেই হয়। আমিও প্রতিদিন দেই।’
কারা এসব ভাড়া আদায় করছে জানতে চাইলে ভীত কণ্ঠে সাদেক আলী বলেন, ‘এলাকার লোকজন।’
আব্দুল গাফফার নামে এক পথচারী জাগো নিউজকে বলেন, ওভারব্রিজ রাস্তা পারাপারের জন্য, পণ্য কেনা-বেচার স্থান নয়। হকারদের কারণে ব্রিজ অনেকটাই সরু হয়ে যায়। ব্রিজের উপর পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটিতে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই এটা দুঃখজনক।
অচিরেই ব্রিজের হকারদের অন্য জায়গায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এলাকার চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এআর/এসএইচএস/আরআইপি