শতবর্ষ পূর্তিতে ১শ’ কোটি টাকা দেবে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীরা
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিজ মহিমায় মহিমান্বিত দেশের সকল মানুষের স্বপ্নের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২০ সালে গৌরবময় পথচলার শতবর্ষ উদযাপন করবে এ শিক্ষালয়টি। মাতৃতুল্য প্রতিষ্ঠানের অনন্য এ অজর্নকে স্মরণীয় করে রাখতে ও গবেষণার উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা দেবে সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুয়া)’।
এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি। গঠন করা হয়েছে ‘ডুয়া অ্যান্ডমেন্ট ফান্ড’ নামে একটি ফান্ড। এছাড়া ফান্ডের হয়ে কাজ করতে তৈরি করা হয়েছে একটি কমিটি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে সংগ্রহ করা হবে এ তহবিল। তাছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করেও টাকা সংগ্রহ করবে এ সংগঠনটি।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ডুয়ার সভাপতি রকীবউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, “আমরা টার্গেট নিয়েছি, বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু পথ এগিয়েছি। সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। আশা করি এ কাজে আমরা সফল হব।”
টার্গেট বাস্তবায়নে তিনি সাবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান সময়ে এ অর্থ কিছুই না। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের সাবেক শিক্ষার্থীরা যদি বিলিয়ন ডলার দিতে পারে, এখানে মাত্র মিলিয়ন ডলার দেয়ার টার্গেট নিয়েছি। তাই এটি তো অনেক কম। এর চেয়ে বেশি দিতে পারলে ভালো লাগতো।
‘ডুয়া অ্যান্ডমেন্ট ফান্ড’ এর ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক জাতীয় অধ্যাপক সুফী আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ফায়েজ, সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন আহমেদ, ডুয়ার সাবেক সভাপতি ড. মঞ্জুর এলাহী, ডুয়ার বর্তমান সভাপতি রকিব উদ্দিন আহমেদ, চাটার্ড অ্যাকাউন্টার (সিএ) আলমগীর কবির, পদাতিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
এছাড়া ডুয়ার অ্যাক্সিকিউটিব কমিটির মধ্য থেকে পদাতিকার বলে কমিটিতে রয়েছেন- সভাপতি, সিনিয়র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দুই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক।
তবে রকিব উদ্দিন আহমেদ ডুয়ার সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালে কমিটি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে গড়াবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২৫ কোটি টাকার বাজেটে দেখা যায়, গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ। তাই ১০০ কোটি টাকার এ তহবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিছুদিন আগে ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গবেষণা। সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা গবেষণায় বেশি বরাদ্দ দিতে পারি না। আমাদের যে বাজেট ঘোষণা হয় তা বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। এ সময় তিনি গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান।
ডুয়া সভাপতি রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাশ করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামি-দামী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, তারা ভালোই আছেন। তাদের এ ভালো থাকার পিছনে মূল অবদান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাছাড়া এটি তো আমাদের মাতৃতুল্য প্রতিষ্ঠান। তাই এমন একটি উদ্যোগে সাবেক সব শিক্ষার্থীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবো।
বাংলাদেশের সকল অর্জনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত উল্লেখ করে ডুয়া সভাপতি আরো বলেন, এ দেশের সকল অর্জনের সঙ্গেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জড়িত। ৫২`র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬৬`র শিক্ষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পতনেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা জড়িত।
যার সুফল পেয়েছেন এদেশের সকল নাগরিক। তাই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের দেশের সব নাগরিকরা এ কাজে এগিয়ে আসবেন বলেও বিশ্বাস রকিব উদ্দিন আহমেদের।
এমএইচ/আরএস