প্রশ্নবিদ্ধ বিরোধী দল নিয়ে চলছে সংসদের কার্যক্রম


প্রকাশিত: ০৬:৩৬ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬

একইসাথে সরকারের মন্ত্রীত্ব গ্রহণ ও সংসদের বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্বপালন করা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম সংসদে এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। দুই বছরেও তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে নিয়মিত অধিবেশন বসে; কিন্তু তাতে মন নেই অধিকাংশ সদস্যের। তবে সরকারি দল মনে করছে সংসদীয় কার্যক্রমে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নজিরবিহীন।

বিএনপিবিহীন বর্তমান জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। আজ শুক্রবার এই সংসদের দুই বছর পূর্তি। নবম অধিবেশন পর্যন্ত ১৬৮ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন ১৪৩ দিন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ছিলেন ৯৬ দিন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে এবারই প্রথম প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। আইন প্রণয়ন, মূলতবি প্রস্তাব আনা, সংসদীয় কমিটিগুলোতে সক্রিয়তা, সরকারের সাধারণ সমালোচনা-কোনো কিছুতেই বিরোধী মেজাজে নেই জাতীয় পার্টি। গত দুই বছরে ৪৮টি আইন প্রণয়ন হয়েছে, এর কোনোটিতেই সরকারকে বিরোধী দলের মুখোমুখি হতে হয়নি। এই সময়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কোনো মূলতবি প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়নি। প্রধান বিরোধী দলের সদস্যরা তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে একবারই মাত্র ওয়াকআউট করেছে। এর বাইরে কার্যকর ও শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় কখনোই দেখা যায়নি তাদের।

৪০ সাংসদের প্রধান বিরোধী দলের এই অবস্থানের বিপরীতে ১৬ জন স্বতন্ত্র সাংসদের মোর্চা অনেক বেশি সক্রিয় ছিল এই দুই বছর। জাতীয় পার্টির কোনো কোনো সদস্য সংসদে সরকারের সমালোচনার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের প্রশংসা করেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। একাধারে বিরোধী দলে এবং সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকায় দলটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের একাধিকবার কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান বিরোধী দল বিএনপির মত সংসদে গালাগালি করে না। ফাইল ছুড়ে মারে না। এমনকি সংসদ বয়কটও করে না। এজন্য সবার ধারণা বিরোধী দল সংসদে কাজ করছে না। কিন্তু এটা ঠিক না। আমরা সংসদে সরকারের ভাল কাজের প্রশংসা করছি। মন্দ কাজের সমালোচনা করছি।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে সরকারের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও আসলে তা হয়নি। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রত্যেকটি সংসদীয় কমিটিকে মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোনো সংসদীয় কমিটিই তা গ্রাহ্য করেনি। দুই বছরে ৫০টি সংসদীয় কমিটির ৬৩৫টি ও উপকমিটির ১১০টি বৈঠক হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৪২টি বৈঠক করেছে সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সবচেয়ে কম একটি বৈঠক করেছে পিটিশন কমিটি। বিশেষ অধিকার-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এবং কার্যপ্রণালি বিধি-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কোনো বৈঠকই হয়নি।

এ বিষয়ে সংসদের প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির ভূমিকা নজিরবিহীনি। তারা সরকারের ভাল কাজের প্রশংসা করছেন । মন্দ কাজের জন্য ওয়াক আউট করছেন।

বর্তমান সংসদ কার্যক্রম কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই কার্যক্রম। সংসদ আমাদের সংবিধান অনুযায়ীই চলছে।

১৯৯১ সাল থেকে দেশে আবার সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দীর্ঘ ২৩ বছরের মাথায় এসে সংসদের বাইরে রয়ে যায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। সংসদে না থাকলেও গত দুই বছর ধরে সংসদ অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল তারাই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েই সংসদে বেশি আলোচনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার  বলেন, বিএনপিকে নিয়ে, বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জাতীয় সংসদে যেভাবে আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তব্য দেয়া হয় তা সত্যিই দুঃখজনক। এটি কার্যপ্রণালীবিধির সুস্পষ্ট লংঘন।

এইচএস/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।