ডার্ক ওয়েবে কিনতেন এলএসডি, বিট কয়েনে দাম দিতেন নাজমুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ০৬ জুলাই ২০২২

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভয়ংকর মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইডের (এলএসডি) সংস্পর্শে আসেন নাজমুল ইসলাম বিশ্বাস (২৬)। পরে ধীরে ধীরে এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। আসক্ত হওয়ার একপর্যায়ে বিদেশ থেকে নিজেই দেশে এলএসডি নিয়ে আসতে শুরু করেন নাজমুল। তখন থেকে তিনি শুধু সেবনকারীই নন, হয়ে যান বিক্রেতাও। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইনে এলএসডি বিক্রি করে আসছিলেন নাজমুল।

এলএসডি সেবন ও বিক্রির অভিযোগে ২০২১ সালে প্রথমবার নাজমুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে এলএসডি মিশ্রিত ১০ পিস রঙিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ জব্দ করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের চার মাস পর জামিনে বের হয়ে যন কিনি। পরে আবারও এলএসডি সেবন ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন নাজমুল।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকার জামিয়া মাদানি মসজিদ রোড থেকে নাজমুলকে ১৩৮ পিস রঙিন প্রিন্ডেট ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডিসহ গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রোর কার্যালয় (দক্ষিণ)।

ডিএনসি জানায়, নাজমুল ইন্টারনেট কারেন্সি বিট কয়েন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশে এলএসডি নিয়ে এসেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে জব্দ হওয়া এলএসডি বিক্রি করা।

বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ের আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল।

মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে ডিএনসির এক কর্মকর্তা ২৫ পিস এলএসডিসহ নাজমুলকে গ্রেফতার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের তার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে আরও ৭১ পিস রঙিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার শিল্প এলএসডি ও ৪২ পিস হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি জব্দ করা হয়। এসময় অনুসন্ধানের স্বার্থে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়।

jagonews24

তিনি বলেন, নাজমুলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের আলৈলঝাড়া থানার নগরবাড়িতে। তিনি ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। নাজমুল ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতকে অধ্যয়নের সময়ে এ মাদকের সংস্পর্শে আসে। তখন বিদেশে অধ্যয়নরত তার বন্ধুদের থেকে তিনি এ মাদক সংগ্রহ করতেন বলে জানান। পরবর্তীসময়ে তিনি ডার্ক ওয়েব ও বিট কয়েন ব্যবহার করে এ মাদক বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতেন এবং এর বাজার সৃষ্টির প্রয়াস চালান। সর্বশেষ তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪০ পিস এলএসডি দেশে নিয়ে আসেন। যার মধ্যে ১৩৮ পিস সহকারে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে এলএসডির অর্ডার করেন নাজমুল। পরে তিনি ইন্টার কারেন্সি বিট কয়েনের মাধ্যমে অর্ডারে দাম পরিশোধ করেন। এ মাদক আন্তর্জাতিক কুরিয়ারা মাধ্যমে এলএসডি তার কাছে দেশে পৌঁছায় বলে তিনি জানান। তবে এসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।

এলএসডির দেশে ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক কোনো চক্র কাজ করছে কি না জানতে চাইলে ডিএনসির এ কর্মকর্তা বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সবসময় চেষ্টা করেন সারাবিশ্বে মাদক ছড়িয়ে দিতে। আমাদের দেশের যুবসমাজ মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট রয়েছে। তবে আমরা সচেতন রয়েছি ও গোয়েন্দা নজরদারি করছি মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করার জন্য।

টিটি/আরএডি/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।