মৃত্যুপথযাত্রী সেই অজ্ঞাত কিশোরের পরিচয় মিলেছে


প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬
ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে গত ২৭ দিন যাবত চিকিৎসাধীন সেই হতভাগ্য কিশোরের পরিচয় অবশেষে পাওয়া গেছে। তার নাম মোহাম্মদ জিহাদ। সে মোহাম্মদপুর টু আবদুল্লাহপুর রোডের ‘চলাচল’ বাসের হেলপার। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন হতভাগ্য কিশোরের বাবা রিকশাচালক নিরব হোসেন।

জিহাদের বাবা ছাড়াও সজিব নামে তার সহকর্মী এক হেলপার বন্ধু সেদিন দুর্ঘটনার পর তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখার ঘটনাটি এ প্রতিবেদকের কাছে বর্ণনা করেছে। সজিবের মা ও সজিব বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢামেক আইসিইউতে জিহাদকে দেখে বাইরে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে জানান, সেদিন জিহাদ বাস ড্রাইভার ভান্ডারির কাছ থেকে দৈনিক মজুরির ২শ’ টাকা নিয়ে নিজের বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু মিরপুর ১০ নম্বরের সামনে সে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

দুপুরে সরেজমিন আইসিইউ পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, দুই নম্বর বেডে মোহাম্মদ জিহাদের কঙ্কালসার দেহটি পড়ে আছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তিন সপ্তাহের বেশি সময় যাবত চিকিৎসাধীন এই কিশোর একটি দিনের জন্য চোখ মেলে তাকায়নি। কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে।

যেভাবে সনাক্ত হলো জিহাদ :

জিহাদের রিকশাচালক বাবা নিরব হোসেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তার তিন মেয়ে এক ছেলে। ভাইবোনের মধ্যে সে তৃতীয়। মিরপুর শেওড়াপাড়ায় তাদের বাসা। জিহাদ চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। আর্থিক অনটনের কারণে গত এক বছর সে লেগুনাতে (হিউম্যান হলার) হেলপারের চাকরি নেয়। মাসখানেক যাবত সে বাসে হেলপারের চাকরি নেয়।

নিরব হোসেন জানান, লেগুনাতে চাকরি করার সময় নিয়মিত বাসায় ফিরলেও বাসে হেলপারের চাকরি নেয়ার পর থেকে সে ৪/৫দিন পরপর ফিরতো। যা রোজগার করতো তার বেশিরভাগই সে তার মা পারুল আক্তারের হাতে তুলে দিতো।

জিহাদের দুর্ঘটনার এতদিন পরে কিভাবে খোঁজ পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসে হেলপারের চাকরি নেয়ার পর সে ৬/৭দিন পর পর বাসায় আসতো। হেলপারের চাকরি নিয়েছে জানলেও কোন বাসে চাকরি নিয়েছে তা জানতেন না।

Boy

প্রথমে কয়েকদিন তারা ছেলের কোনো খোঁজই নেননি। ভুলেও ভাবেননি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। মনে করেছেন সে ডিউটিতে আছে। ৮/৯দিন পরও বাসায় না ফেরায় তারা বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্টারে খোঁজ নেন। কিন্তু অনেকের তথ্য তাদের বিভ্রান্ত করে। বিভিন্ন বাসে বিভিন্ন জায়গায় তাকে দেখেছে বলে জানায় তারা।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর বুধবার আবদুল্লাহপুরে গিয়ে ভান্ডারি নামের এক বাসচালকের কাছে জানতে পারেন, জিহাদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত।

ভান্ডারি জানান, সজিব নামের এক হেলপার দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানে। এরপর নিরব হোসেন ঢাকা মেডিকেল ও পঙ্গুতে খোঁজাখুঁজি করেও জিহাদের কোনো সন্ধান পাননি।

পরে সজিবের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ছেলের ছবি দেখতে পান।

এ সময় তার উদ্ধারকারী রাজিব নামের এক তরুণের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে ঢামেক গিয়ে আইসিইউতে জিহাদকে সনাক্ত করেন।

গতকাল (বুধবার) দুপুরে আইসিইউর সামনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জিহাদের সহকর্মী হেলপার সজিব জানায়, সেদিন মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের সামনে সে জিহাদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে। তার কিছুক্ষণ আগেও তার সঙ্গে জিহাদের কথা হয়। সে জানিয়েছিল, বাস ড্রাইভারের কাছ থেকে ২শ’ টাকা নিয়েছে সে। সেদিন তার বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো।

সজিব আরো জানায়, তার মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় সে রাস্তায় নেমে পড়ে। কিছুক্ষণ পরই সে মানুষের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে জিহাদকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। কিন্তু কিভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তা সে দেখেনি বলে জানায়।

সজিবের মা জানায়, জিহাদ তার ছেলের সঙ্গে একদিন তাদের বাসায় গিয়েছিল। দুর্ঘটনার দিন তার ছেলে বাসায় গিয়ে কান্নাকাটি করে জিহাদের রক্তাক্ত দেহ দেখে এসেছে বলে জানায়। ওইদিনের পর থেকে তারা বিভিন্ন মেডিকেলে খোঁজ করলেও সন্ধান পায়নি।

বৃহস্পতিবার আইসিইউতে জিহাদকে দেখে সজিবের মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি জানান, জিহাদকে চিনলেও তার বাবা-মা কোথায় থাকে তা জানতেন না।

এদিকে রাজিব নামের যে তরুণ জিহাদকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় ঢামেক হাসপাতালে নেন তিনি বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সজিব জানে কোন বাসচালকের কারণে জিহাদ অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। কিন্তু ভয়ে সে মুখ খুলছে না।

তিনি জানান, রিকশাচালক নিরব হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সজিবের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাস চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

গত শনিবার রাত ৯টায় জাগো নিউজে ‘মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেটির পাশে নেই কোনো আপনজন’ শীর্ষক মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওই খবরটি পড়ে মৃত্যুপথযাত্রী অজ্ঞাত কিশোরকে বাঁচাতে সাহায্য করতে চান বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মডেল, বৈমানিক, মিস আয়ারল্যান্ড ও মিস আর্থ-২০১৬ এর সেকেন্ড রানার্স আপ মাকসুদা আক্তার প্রিয়তিসহ আরো অনেকে। ছেলেটির পরিচয় সনাক্ত হওয়ার প্রত্যাশা পূরণ হলেও জিহাদ আদৌ বাঁচবে কিনা তা নিয়ে চিকিৎসকরা সন্দিহান!

এমইউ/একে/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।