রেলের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি


প্রকাশিত: ০৯:১৯ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

রেলওয়ে খাতের আয়, ব্যয়, খরচের খাত, বিদেশি অর্থায়ণ ও ঋণের টাকা খরচের হিসেব চেয়ে শ্বেতপত্র দাবি করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ। ভাড়া বাড়ানো তো দূরের কথা রেলের ভাড়া আরো কমানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।

সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সঞ্চালনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ প্রফেসর বলেন, ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে রেল ছিল ৪ হাজার কিলোমিটার জুড়ে। আর সড়ক পথ ছিল মাত্র ৪শ` কিলোমিটার। সেখানে এতো বছরেও রেলের সম্প্রসারণ হয়নি এক কিলোমিটারও। তবে সড়কপথ বেড়েছে কয়েকশ` গুণ। জনগণের টাকায় চলে রেল, সেখানে খরচ বাড়লেও সম্প্রসারণ হয়নি।

তিনি আরো বলেন, যে পরিবহনে জমি, খরচ, দুর্ঘটনার ঝুঁকি, জ্বালানি খরচ কম, যাতায়াত নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত সেখানে সম্প্রসারণ ও উন্নতির কোনো আগ্রহ নেই সরকারের। সরকারের আগ্রহ শুধু বড় বড় প্রজেক্টে। যেখানে দুর্নীতি বেশি, বিদেশি অর্থ সেখানে।

আনু মোহাম্মদ বলেন, এখন সরকার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি উত্থাপন করেছে। কারণ হচ্ছে সরকার বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণের টাকা কিভাবে খরচ হবে সে শর্তও দিয়েছে তারা। শর্তে, রেলের জনবল ছাটাই, ভাড়া বৃদ্ধি, স্টেশন কমানোর শর্ত আরোপ করেছে। এমন বিদেশি প্রজেক্ট চালু হলে রেলওয়ের অবস্থা হবে পাট খাতের মতোই।

আনু মোহাম্মদ আরো বলেন, কমলাপুর-গাজীপুর পর্যন্ত ৪ লেনের রেললাইন স্থাপন করা হলে ঢাকায় যানজট কমবে। আশুলিয়া আরিচা পর্যন্ত রেলের সম্প্রসার হলে মানুষ খুব সহজে আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে পারবে। এর জন্য হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট দরকার পড়ে না। শুধু দরকার সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা।

বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় স্টেশন বেড়েছে কিন্তু কমেছে চালক ও স্টেশন মাস্টারের সংখ্যা, কমেছে ওয়ার্কসপের সংখ্যাও -বলেন আনু মোহাম্মদ।

এডিবির ১০ লাখ ডলার ঋণের টাকা খচরে খাতে যোগ করেছে, ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্ট দেশি ও আঞ্চলিক কনসালটেন্ট নিয়োগ করতে হবে। সেখানে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য মাত্র ৪০ হাজার ডলার রেখেছে। এই ঋণের টাকায় রেলের কোনো উন্নতি হবে না বরং সুপরিকল্পিতভাবে রেলকে প্রাইভেটাইজেশন করার কৌশল নিয়েছে এডিবি।

রেলমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে আনু মোহাম্মদ বলেন, এই ভদ্রলোক অনেক হাস্যরস ও মজা দিয়েছেন। তার চেহারাই তো রেলের সঙ্গে যায় না। তিনি কোনো সম্প্রসারণ নীতিই গ্রহণ করেননি। ভারত যেখানে ঋণের নীতি বাদ দিয়ে দেশীয় চিন্তায় জনগণের টাকায় রেলকে জনবান্ধব করছে সেখানে বাংলাদেশে এর কোনো চিন্তাই নেই।

রেলের অবস্থা ফুটো কলশিতে পানি ঢালার মতোই উল্লেখ করে আনু মোহাম্মদ বলেন, ঋণের টাকায় কেন ওয়ার্কসপ না বেড়ে কমলো, কতোবার বিদেশ সফর হয়েছে, ডেমু ট্রেন কিনে তা অকার্যকর কেন, খরচের খাত ও আয়ের খাত সম্পর্কে জনগণকে জবাব দিতে হবে। এ সংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেন তিনি।

এ সময় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাসদের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রেলপথ বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আব্দুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।