‘বেশ কয়েকজন জঙ্গি র্যাবের নজরদারিতে, শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে’
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশজুড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পুলিশের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এখন পর্যন্ত তারা গ্রেফতার করেছে আড়াই হাজার জঙ্গি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিসান হামলার পর ১৬শর বেশি জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার করেছে র্যাব।
হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ছয় বছর উপলক্ষে দেশে জঙ্গিবাদ দমনে এলিট ফোর্সের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।
জাগো নিউজ: বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিদের অবস্থান কোথায়?
খন্দকার আল মঈন: বাংলাদেশে জঙ্গি একটি পরাজিত শক্তি। বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। যখনই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের চেইন অব কমান্ডের অব্যাহত অভিযানে সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। হলি আর্টিসানের ঘটনা বাঙালির একটি কলঙ্কের দিন। এ হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের সবাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করেছেন। অব্যাহত এই অভিযানের ফলে জঙ্গিদের নেটওয়ার্কের অনেকটাই ভঙ্গুর অবস্থা। তবে তারা থেমে নেই, বর্তমানে জঙ্গিদের কার্যক্রম অনেকটাই অনলাইনভিত্তিক। অনলাইনে তারা সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। অনলাইনে র্যাবের সাইবার পেট্রোলিং চলমান।
জাগো নিউজ: বর্তমানে জঙ্গিদের সক্ষমতা কতটুকু?
খন্দকার আল মঈন: সম্প্রতি যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের আমরা গ্রেফতার করেছি। আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গি র্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারবো বলে আশা করছি। তাদের থেকে আমরা একধাপ এগিয়ে আছি। এই মুহূর্তে র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যমতে, জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই।
জাগো নিউজ: দেশের জঙ্গিরা কোনো দেশ থেকে সহায়তা নিয়ে নতুনভাবে তাদের কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করছে কি না?
খন্দকার আল মঈন: জঙ্গিরা বিভিন্ন অ্যাপস দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করছে। নিজেদের মধ্যে তারা অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতির মতো ঘটনাও তারা বিভিন্ন সময় ঘটিয়েছে। একটি সংগঠন পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন, সদস্যের প্রয়োজন। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব জেনেছি। এরই মধ্যে যেসব জঙ্গিকে আমরা গ্রেফতার করেছি তাদের কাছ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সহায়তা নিয়ে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর কোনো পরিকল্পনা আমরা পাইনি। আর বিদেশ থেকে জঙ্গিদের অর্থ যারা দিচ্ছেন তাদের বিষয়েও খোঁজ-খবর রাখছি, তাদের পরিচয় ও তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।
জাগো নিউজ: একজন জঙ্গিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র্যাব কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
খন্দকার আল মঈন: আমরা জঙ্গিদের গ্রেফতার করে শুধু আইনের আওতায় আনছি তাই নয়, জঙ্গিরা যাতে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে র্যাব এমন কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পদক্ষেপ এখনো চলমান। এছাড়া র্যাবের একটি নম্বর দেওয়া রয়েছে, যাতে একজন জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তিনি ফোন করে সহায়তা চাইতে পারেন। র্যাবের কাছে ১৬ জন জঙ্গি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে চাইলে তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
জাগো নিউজ: এ পর্যন্ত র্যাব কতজন জঙ্গি গ্রেফতার করেছে?
খন্দকার আল মঈন: র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার জঙ্গি গ্রেফতার করেছে। শুধু হলি আর্টিসান হামলার পরে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে ১৬শর বেশি জঙ্গি সদস্য। এর মধ্যে ৮৬৪ জন জেএমবি সদস্য, আনসার আল ইসলামের ৪০৬ সদস্য, আল্লাহর দলের ২০১ সদস্য, হিজবুত তাহরীরের ৮৮ সদস্য, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৮৬ ও হুজির ৩০ সদস্য রয়েছেন।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি ৬৫টি অস্ত্র, ২৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১০২টি গ্রেনেড/ককটেল, ৮০টি ডেটোনেটর ও সাড়ে ১৬ কেজি বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক জব্দ করা হয়।
জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
খন্দকার আল মঈন: আপনাকে ও জাগো নিউজ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
টিটি/এএসএ/জিকেএস