দেশে উৎপাদিত ফলের ৬০ শতাংশই আম-কাঁঠাল-কলা

নাজমুল হুসাইন
নাজমুল হুসাইন নাজমুল হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫১ এএম, ২৯ জুন ২০২২
দেশি মৌসুমি ফল

#উৎপাদিত ফলের ৫৪ শতাংশই আসে মৌসুমের চারমাসে
#বাকি আটমাসে পাওয়া যায় মাত্র ৪৬ শতাংশ ফল

বাংলাদেশে দেশি–বিদেশি ৭৮ রকমের ফল চাষ হচ্ছে। তবে উৎপাদিত ফলের ৬০ শতাংশ আম, কাঁঠাল ও কলা। সঙ্গে তরমুজ, পেয়ারা এবং আনারস ধরলে সেটি হবে ৭৭ শতাংশ। এসব ফলের অধিকাংশই মৌসুমি ফল। এ কারণে সারা বছরের উৎপাদিত ফলের ৫৪ শতাংশই আসে মৌসুমের চারমাসে (মে থেকে আগস্ট)। বাকি আটমাসে (সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল) পাওয়া যায় মাত্র ৪৬ শতাংশ ফল।

দেশে সার্বিক ফল উৎপাদনের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ আম। ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কাঁঠাল এবং ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কলা। এছাড়া ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ তরমুজ, ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ পেয়ারা এবং ৪ দশমিক ৫ শতাংশ আনারস চাষ হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিএসও বাবুল চন্দ্র সরকার। জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ তথ্য জানান তিনি।

ওই প্রবন্ধে আরও বলা হয়, শুধু এ কয়েকটি মৌসুমি ফল উৎপাদনের আধিক্যের পাশাপাশি আরও কিছু কারণে ফলের অপচয়ও বাংলাদেশে অনেক বেশি। দেশে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হচ্ছে মৌসুমি ফলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নষ্ট হচ্ছে পেঁপে, যা সাড়ে ৫১ শতাংশ। এছাড়া ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ লিচু, ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ আম, ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ কলা এবং ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ কাঁঠাল নষ্ট হচ্ছে প্রতি মৌসুমে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বাবুল চন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, এ অপচয় রোধ করা গেলে বর্তমানে ফলের যে প্রাপ্যতা সেটা আরও বাড়ানো যেতো। সরকার যে পুষ্টিজাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা ভাবছে সেটা ত্বরান্বিত হতো।

তিনি বলেন, নানা জাতের বিদেশি ফল চাষ শুরু হলেও আমরা এখনো দেশি মৌসুমি ফলের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে কাছাকাছি সময়ে যখন সব ধরনের ফল বাজারে আসছে, তখন সেগুলো খাওয়ার আগ্রহ কম থাকছে। অপচয় হচ্ছে বেশি। ফলে সারাবছর যেন পাওয়া যায় এ লক্ষ্যে সব ধরনের ফল চাষের পরিকল্পনা দরকার। যেন পুরো সময় বাজারে কোনো না কোনো ফলের ব্যাপক সরবরাহ থাকে।

এদিকে দেশের মানুষের ফলের প্রাপ্যতার হার এখনও অনেক কম। বর্তমানে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রামের বিপরীতে মাত্র ৮২ গ্রাম খেতে পারছেন। এটিকে ২০০ গ্রামে উন্নীত করতে হলে ফলের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে হবে।

আমরা এখনো দেশি মৌসুমি ফলের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে কাছাকাছি সময়ে যখন সব ধরনের ফল বাজারে আসছে, তখন সেগুলো খাওয়ার আগ্রহ কম থাকছে। অপচয় হচ্ছে বেশি। ফলে সারাবছর যেন পাওয়া যায় এ লক্ষ্যে সব ধরনের ফল চাষের পরিকল্পনা দরকার।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে হারে জমি কমছে সে পরিস্থিতিতে ১৭ কোটি মানুষের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তারপরও পুষ্টিজাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে আমরা যেমন বিপ্লব ঘটিয়েছি, তেমনি ফলের উৎপাদনেও বিপ্লব ঘটাতে চাই।

ফল উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে সার্বিক উৎপাদনের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ আম। ২১ দশমিক ৩৫ ভাগ কাঁঠাল এবং ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কলা। এছাড়া দেশে উৎপাদিত ফলের মধ্যে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ তরমুজ, ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ পেয়ারা এবং ৪ দশমিক ৫ শতাংশ আনারস চাষ হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রামের বিপরীতে মাত্র ৮২ গ্রাম খেতে পারছেন। এটিকে ২০০ গ্রামে উন্নীত করতে হলে ফলের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে হবে।

দেশে উৎপাদিত ফলের ৬০ শতাংশই আম-কাঁঠাল-কলা

বিজ্ঞাপন

পেঁপে, লিচু, কুল, কমলা, লেবু, জাম এবং নারিকেলের উৎপাদন একভাগের ওপরে। বাকি ফলগুলোর সার্বিক উৎপাদন একভাগেরও কম।

এমন পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ এখন কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে রয়েছে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।

দেশে উৎপাদিত ফলের ৬০ শতাংশই আম-কাঁঠাল-কলা

বিজ্ঞাপন

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন। বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক কোটি ২২ লাখ টন। বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ফসলভিত্তিক আয়ের আনুমানিক প্রায় ১০ শতাংশ ফল থেকে আসে।

এনএইচ/কেএসআর/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।