১৯৭০ সালের পাকিস্তানপন্থি এমএনএ-এমপিএদের তালিকা হবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ২৭ জুন ২০২২
জাতীয় সংসদ/ফাইল ছবি

রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর পাশাপাশি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএদের (আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য) মধ্যে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন তাদের তালিকাও তৈরি হবে। সংসদে উত্থাপিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল পরীক্ষার সময় এই ধারা যুক্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সোমবার (২৭ জুন) সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন।

এর আগে গত ৬ জুন ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংসদে তোলা বিলে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাহারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপ দ্বারা নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করিয়াছেন অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে, সক্রিয়ভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছেন; তাহাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করবে।’

সংসদীয় কমিটি ‘মুজাহিদ বাহিনী’ ও ‘পিস কমিটির’ সদস্যদের তালিকা তৈরির বিধান রাখা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যাঁরা এমএনএ ও এমপিএ নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়ার কারণে শূন্য ঘোষিত আসনে উপনির্বাচনে পাকিস্তান সরকারের নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএদের তালিকা তৈরির বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা এই আইনে গৃহীত হবে। সংসদীয় কমিটি ওই সংজ্ঞা বিলের ধারায় যুক্ত করেছে।

কাউন্সিলের আটজন সদস্য প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবে।

উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারসমূহের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, এই বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবও এই পরিষদে থাকবেন।

কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে।

২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিলের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সুপারিশও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইনের ভাষা পরিমার্জনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে পাঠানো হয়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি সংশোধনী দিয়ে ওই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা গত জুনে মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হয়।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে ২০২০ সালে একটি উপ-কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করবে। পরে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। গত এপ্রিল মাসে আগের কমিটি ভেঙে নতুন করে উপ-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।

এইচএস/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।