৭ খুন মামলার চার্জ গঠন ৮ ফেব্রুয়ারি


প্রকাশিত: ০৫:৪৪ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দুটি মামলার চার্জ গঠন আরেক দফা পেছালো। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী চার্জ (অভিযোগ) গঠনের দিন ধার্য করেছে আদালত। বুধবার চার্জ গঠনের শুনানির দিন থাকলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগপত্রের সার্টিফাই কপির অনুলিপি না পাওয়ার কথা বলে সময়ের আবেদন করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে শুনানি শেষে পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সাত খুনের দুটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র‌্যাবের চাকরিচ্যুতে তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফুর রহমান, এমএম রানাসহ ২৩ জনকে হাজির করা হয়।
 
এদিন আদালতে নূর হোসেন ও র্যা বের তিন কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের জামিন আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহাসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী। তিনি জানান, চার্জশিটের সার্টিফাই কপি এখনও হাতে না পাওয়ায় চার্জ গঠনের শুনানি পেছাতে সময় আবেদন করেছিলাম।

এদিকে মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, মামলার চার্জ গঠনের শুনানির দিন থাকলেও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগপত্রের সার্টিফাই কপি অনুলিপি না পাওয়ার অজুহাতে সময়ের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে আগামী ৮ ফ্রেব্রুয়ারি চার্জ গঠনের দিন ধার্য করেন। আমরা আশা করছি আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী পলাতকসহ গ্রেফতার হওয়া সকল আসামরি বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন।

তিনি আরও জানান, নূর হোসেন একজন আতঙ্কের নাম। বাদীসহ তার আত্মীয়স্বজনরা আতঙ্কে ভুগছেন। বাদীসহ মামলার সাক্ষীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নূর হোসেনের লোকজন মামলার সাক্ষীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন তারা যেন আদালতে সাক্ষ্য না দেয়। এতে করে বাদীসহ মামলার সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সাখাওয়াত আরও জানান, পুলিশ আসামির পক্ষ অবলম্বনসহ কারসাজির মাধ্যমে নূর হোসেনকে রিমান্ডের আবেদন করেনি। নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সাত খুনের ঘটনায় রাঘবোয়ালদের নাম বেরিয়ে আসতো। এখন সেই রাঘবোয়ালদের ইন্ধনে নূর হোসেনের লোকজন আদালত ও আদালতের বাইরে প্রভাব বিস্তার করে বাদীপক্ষকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, নূর হোসেনকে দেশে আনার পর থেকে নূর হোসেনের সন্ত্রাসীরা আস্তে আস্তে এলাকায় আসতে শুরু করে। আর এসব সন্ত্রাসীরা এলাকায় মহড়া দেয়ায় নিহতের পরিবার এখন আতঙ্কিত। যেকোন সময় সন্ত্রাসী নূর হোসেনের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালাতে পারে। আর নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ পহড়ার জন্য পুলিশের মহাপরিচালক (আইজীপির) বরাবর আবেদন করা হয়েছে।  
 
প্রসঙ্গত, গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
 
সাত খুনের ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল পৃথক দুটি করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামনুর রশিদ মন্ডল। ইতোমধ্যে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছে আরও ১২ জন।
 
নূর হোসেন ছাড়া বাকিরা হলেন- সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, এমএম রানা ও আরিফ হোসেন, র‌্যাব সদস্য এসআই পুর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
 
র‌্যাবের সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরীফ, তাজুল ইসলাম ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান পলাতক।
 
হত্যার দায় স্বীকার করে র‌্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র‌্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শাহাদাত হোসেন/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।