‘পুরা ঈদ ঈদ লাগছে’
জনসাধারণের জন্য পদ্মা সেতুতে যান চলাচল চালুর দিনে উৎসব আর স্বস্তির যাত্রায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ভোর ৫টা থেকেই লাইনে দাঁড়ায় প্রায় শতাধিক যান। সকাল ৬টায় যান চলাচল চালুর কথা থাকলেও উৎসুক চালকদের আগ্রহে ৫টা ৪০ মিনিটেই টোল দেওয়া শুরু হয়।
রোববার (২৬ জুন) সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
বাসচালক মো. সৈকত জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমবার পদ্মা সেতুতে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ফেরির জন্য আগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কয়েক ঘণ্টা লাগতো ওপারে যাইতে। আজ মাত্র কয়েক মিনিটেই চলে যাবো। পুরা ঈদ ঈদ লাগছে।
যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক মোহাম্মদ আব্বাস আলী বলেন, খুব ভালো লাগছে। প্রথম দিনেই ট্রাক নিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠতে পেরেছি।
যাত্রীরা প্রথমবার বাসে উঠে পদ্মা সেতু পার হওয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বাসে থাকা এক যাত্রী বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের জন্য প্রথম দিনেই আমি পাড়ি দিতে পারছি এইটা ইতিহাস হয়ে থাকবে আমার জীবনে।
পরিবার নিয়ে ওপারে যাচ্ছেন অনেকে। প্রাইভেটকারের এক যাত্রী বলেন, পরিবার নিয়ে প্রথম দিনেই পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি। এটা আমাদের জন্য একটা ভালোলাগার দিন। কত দুর্ভোগ নিয়ে পদ্মাপাড়ি দিয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না।
প্রথমবার পদ্মাপাড়ি দেওয়া এক শিশু জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথম পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।
রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এ সেতুর দ্বার। এর আগে শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এ সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে নির্ধারিত টোল দেন। ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওনা করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটের জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।
২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার। পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। এক শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
আরএসএম/বিএ