ডিজিটালকরণে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একটি পরিষেবা ডিজিটাল করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ২১ জুন ২০২২

বাংলাদেশ সরকারের এটুআই’র (অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট) পলিসি অ্যাডভাইজার অনির চৌধুরী বলেছেন, সরকারি কার্যক্রমকে ডিজিটালকরণের আওতায় আনতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একটি পরিষেবা ডিজিটাল করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। মূলত তাদের ডিজিটালকরণ প্রক্রিয়ায় আনতে হবে এবং তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।

সোমবার (২০ জুন) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। ‘ডিজিটালাইজেশন অ্যান্ড নিউ ফ্রন্টিয়ার্স অব সার্ভিস ডেলিভারি: অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সম্মেলনটির আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)।

অনির চৌধুরী বলেন, সময় ও খরচ কমাতে ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে পরিষেবার সমন্বয়ে অনেক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ১০টি ডিজিটাল পরিষেবা দিয়ে শুরু করেছিল। এখন এই সেবার সংখ্যা দেড় হাজার। শুরুর দিকে মাত্র দুটি পরিষেবা কেন্দ্র ছিল, যেখানে মানুষ ডিজিটাল সেবাগুলো পেতো। এখন এর সংখ্যা সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আট হাজার দুইশ।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, যাদের কাছে ইন্টারনেট নেই ও সরকারি সেবা সম্পর্কে তথ্য পেতে যাদের ভুগতে হয়, তাদের জন্য ৩৩৩ চালু করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে রিপোর্ট করতে মানুষ এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা শুরু করে, যা অনেক মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছে। কোভিড-১৯ চলাকালে এটি কোভিড সংক্রান্ত তথ্য প্রচার ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাক্তারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। পরে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্যও এটি ব্যবহৃত হয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন। তিনি বলেন, ডিজিটালকরণের প্রাথমিক দিকে কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল মনে হলেও অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় তা সুসংবদ্ধ পরিবর্তন আনতে পারে। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে ডিজিটালকরণ পরিবর্তনের ছোঁয়া আনছে। বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা পাওয়া যাচ্ছে, এতেই তা প্রমানিত হয়।

স্টেফান ডারকন বলেন, ডিজিটাল রূপান্তর কেবল পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, পণ্য ও সেবার উৎপাদন, মূলধন বিনিময়, উৎপাদন ও বিতরণ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারেও পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন- বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিবহনে ডিজিটালকরণের ফলে আরএমজি খাতে উল্লেখযোগ্য লাভ হয়েছে।

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সালে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের আলোচ্যসূচি ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশ একটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছে। বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার উন্নতি ও উন্নয়নের ফলাফল ও পদ্ধতিকে দৃঢ় করতে ডিজিটালকরণের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে—এমন ধারণা থেকেই সম্মেলনটি অনুপ্রাণিত।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য একটি অর্থবহ, গুরুত্বপূর্ণ ও রূপান্তরযোগ্য ডিজিটালকরণ কর্মপদ্ধতি প্রদান করতে হলে আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা ও জ্ঞানকেন্দ্রিক শক্তিশালী একটি কার্যসূচি। এ সম্মেলন সেই গতিশীল সঠিক কৌশলটি প্রদান করতে সক্ষম বলে আমরা আশা করি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং উদ্বোধনী বক্তব্যে কীভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে তা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, অতীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন ইস্যুতে মনোনিবেশ করেছে। এরই পথ ধরে ভবিষ্যতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে প্রযুক্তির ওপরে জোর দেবে। কারণ সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি তথা ডিজিটালকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিআইজিডি জানায়, বৈশ্বিক জ্ঞান আদান-প্রদানের পাশাপাশি, সম্মেলনের আরেকটি মূল উদ্দেশ্য কীভাবে ডিজিটালকরণ দেশের ভবিষ্যৎ রূপকল্প-২০৪১ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা। ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য নির্মূল করে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

এএএম/আরএডি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।