‘সিলেট-সুনামগঞ্জে দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে’
সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার ও বুধবার থেকে পানি কমে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি কমতে শুরু করবে। তবে ওই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ জুন থেকে শুরু করে উজান থেকে নেমে আসা পানি ও বন্যায় দেশের উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলে এ পর্যন্ত ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের বন্যা ও পাহাড়ি ঢল। এবারের বন্যায় সিলেটের ৬০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের ৮০-৯০ শতাংশ পানিতে ডু্বে গেছে। গত দুই দিনে চার ফুট করে আট ফুট পানি বেড়েছে ওই এলাকায়, যা চিন্তাতীত।
ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী একসঙ্গে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। শনিবার (১৮ জুন) রাতের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৮০ লাখ করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটসহ শুকনো খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দুই এলাকায় দেড় হাজার টন চাল পাঠানো হয়েছে। হাতে পাঁচ কোটি টাকা রয়েছে। আরও ২০ কোটি টাকা জিআর থেকে চাওয়া হয়েছে।
‘ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। যে কারণে আমাদের দেশে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। পরের দুই দিনে পানি নামতে শুরু করবে।’
তিনি আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে। পর্যাপ্ত অর্থ খাদ্য রয়েছে। আশা করি একটা টেকশই অবস্থানে থাকতে পারবো। দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনিটর করছেন। সবসময় খোঁজ নিচ্ছেন। তার দিকনির্দেশনা মেনেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
গত ১৫ মে এ বর্ষায় প্রথম দফায় বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার (১৫ জুন) থেকে সিলেটের নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের মধ্যেই সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে।
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিলেটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বাসা-বাড়ি ভাসিয়ে নিয়েছে। একদিনে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটের মানুষজন। বন্যার পানির এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
ভয়াবহ বন্যার শিকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন সিলেটের বানভাসি মানুষ। এছাড়া জেলার কৃষকরা তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা মানবিক সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জেও গত দুই দিন ধরে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলাই। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৪ লাখেরও বেশি মানুষ।
এরই মধ্যে পুরো সুনামগঞ্জ শহর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো সুযোগও নেই শহরবাসীর। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় না খেয়েই দিন পার করছেন লাখো মানুষ। অনেকে ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
আইএইচআর/ইএ/এএসএম