রোহিঙ্গা সংকট: তহবিল ঘাটতি মেটাতে সমন্বিত পরিকল্পনায় গুরুত্বারোপ
ক্যাম্পে অর্থবহ কাজে রোহিঙ্গাদের নিয়োজিত করতে তাগিদ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া বৈশ্বিক তহবিল ঘাটতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।
বুধবার (১৫ জুন) কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত ওয়েবিনারের তারা এ মতামত দেন।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) এম. তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য এইড সহায়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর উচিত হবে বৈশ্বিক দাতাদের আকৃষ্ট করার জন্য উপযুক্ত পন্থা খুঁজে বের করা।
বেসরকারি অলাভজনক সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ইপসা’র প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান বলেন, এখানে মূল বিষয়বস্তু হলো এইড প্রদানে স্বচ্ছতা আনা। তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলো ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর শুধু তহবিল সংগ্রহ, মনিটরিং ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মতো কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখা উচিত। আর স্থানীয় এনজিওগুলোর কাজ হবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন।
ওয়েবিনারের সভাপতি শিরীন হক বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে সরকারের উচিত একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করা এবং অ্যাডভোকেসির জন্য গোলটেবিলের আয়োজন অব্যাহত রাখা। তিনি বলেন, আমরাও স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন রিফিউজি হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছি। রোহিঙ্গারাও আমাদের দেশে এক সংকটে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়দানের ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল হয়েছে।
এসময় বক্তারা রোহিঙ্গাদের গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি যেহেতু বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংকটের কারণে সহায়তার পরিমাণ কমে যাচ্ছে তাই তার সঙ্গে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে তারা একটি সম্মিলিত পরিকল্পনা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও ক্যাম্পে বিভিন্ন কার্যক্রম বিশেষ করে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার সীমিত করারও আহ্বান জানান তারা।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রতিনিধি জোহানেস বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক এনজিওসহ স্থানীয় এনজিওগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের তাদের কথা ভাবতে হবে।
মালটেজার ইন্টারন্যাশনালের দেশীয় ব্যবস্থাপক রাজন ঘিমিরি রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় এনজিওগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেন।
আইওএম’র আব্দুস সাত্তার বলেন, রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ঘিরে নানা টেনশন বিরাজ করছে। অমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, লোকালাইজেশন রোডম্যাপ বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। তিনি রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
ইউএন ওমেনের দিলরুবা হায়দার বলেন, রোহিঙ্গা নারীরা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ শুরু করছেন। তারা মানবিক কর্মকাণ্ডগুলোতেও অংশ নিতে চান।
ওয়েবিনারে আরও অংশ নেন- ডব্লিউএফপি’র কক্সবাজার অফিস প্রধান শীলা গুরুদুম, সেভ দ্য চিলড্রেনের মাহিন চৌধুরী, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মাহাদী মাহমুদ, ডিজাস্টার ফোরামের নাঈম গওহর ওয়ারহা, আসিফ মুনির প্রমুখ।
পালসের প্রধান নির্বাহী আবু মোর্শেদ চৌধুরী, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী ও সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওয়েবিনার পরিচালনা করেন।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) ৬০টি এনজিও’র একটি নেটওয়ার্ক।
এইচএআর/কেএসআর/এএসএম