সাগরদাঁড়িতে বসেছে মধুমেলা
সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে / সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে...। কপোতাক্ষ নদ কবিতার মাধ্যমে দেশাত্মবোধক চেতনার নতুন মাইলফলক স্থাপন ও বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবক্তা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯২তম জন্মবার্ষিকী ২৫ জানুয়ারি। মধুকবির এবারের জন্মদিনকে ঘিরে জন্মস্থানে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের এই দিনে যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মধুকবি তার বিশাল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বাংলা সাহিত্যে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। অসাধারণ প্রতিভাধর এই কবি তার সৃষ্টিশীলতায় বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর।
মধুসূদন দত্তের পিতা রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতায় ওকালতি করতেন। মাতা জাহ্নবী দেবী সাধ্বী ও গুণশালিনী নারী ছিলেন। মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয় সাগরদাঁড়িতেই। ১৩ বছর বয়সে মধুসূদন চলে যান কলকাতায়। ধর্মান্তরিত হলে মাইকেল মধুসূদনকে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে হন। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মৃত্যু হয় কবির।
কবির মৃত্যুর পর তার ভাইয়ের মেয়ে কবি মানকুমারি বসু ১৮৯০ সালে সাগরদাঁড়িতে কবির প্রথম স্মরণসভার আয়োজন করেন। সেই থেকে শুরু হয় মধু মেলার। এরই ধারাবাহিকতায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসন এবারো আয়োজন করেছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলাকে ঘিরে এরই মধ্যে উৎসব আমেজের সৃষ্টি হয়েছে কেশবপুরসহ আশপাশের এলাকায়। মেলায় বিনোদনের নানা আয়োজন ছাড়াও প্রতিদিন মঞ্চে থাকছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবার মধুকবির জন্মজয়ন্তী উৎসবকে ঘিরে কবির জন্মস্থানে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। এ দাবিতে গঠিত হয়েছে আন্দোলন কমিটি। যশোরবাসীর প্রাণের দাবি মহাকবি মধুসূদন দত্তের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এদিকে, প্রতিবারের মতো এবারো মধুমেলা উপলক্ষে কপোতাক্ষের দুই পাড়ের যশোর ও সাতক্ষীরাবাসীর ভেতর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। মেলা উপলক্ষে এবারো মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজন আপ্যায়নে গ্রামের গৃহবধূরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। মেলায় সার্কস, কুটির শিল্পসহ গ্রামীণ পসরার বৈচিত্র্যময় সমাহার রয়েছে।
মিলন রহমান/এআরএ/পিআর