সিদ্ধান্তে অনড় থেকেই রওশনকে পাশে চান এরশাদ


প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬
ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে মনোনীত করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। তবে দলের স্বার্থে রওশনকে দরকার জানিয়ে ওই সিদ্ধান্ত (জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান) মেনে নিতে সংসদীয় নেতা রওশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।  

রোববার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানান এরশাদ। এর আগে বিবৃতির বিষয়টি চিঠি আকারে রওশনের কাছে পাঠান তিনি।

জানা যায়, জাতীয় পার্টিতে নেওয়া নতুন কিছু সিদ্ধান্তে কয়েক দিন ধরে এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশনের মধ্যে চলছে বিরোধ। এ নিয়ে দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এরশাদ ও রওশনকে কেন্দ্র করে জাপায় দুটি বলয় তৈরি হয়। সে বলয় এখন প্রকাশ্য দুই শিবিরে বিভক্ত। দুই পক্ষের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি আহ্বান, চাওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। এর মধ্যে রোববার রওশনকে চিঠি পাঠিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিলেন এইচ এম এরশাদ।

চিঠিতে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই বলে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তার স্ত্রী ও দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদকে জানিয়েছেন। শনিবার রওশনের দেওয়া বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এই চিঠি দিলেন এরশাদ।

গত রোববার রংপুরে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন এরশাদ। পরের দিন (সোমবার) গুলশানে এক বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা রওশনকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয় একটি অংশ। এর পরদিন (মঙ্গলবার) এরশাদ জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব পদ থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে অব্যাহতি দিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবার দলের নতুন মহাসচিব ঘোষণা দেন।

শনিবার রওশন এসব বিষয়ে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি এরশাদের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

রওশনের সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে চিঠিতে এরশাদ তার স্ত্রীকে ‘প্রিয় সহকর্মী’ সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘আপনি পার্টির একজন শীর্ষ নেতা এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কোনো বিষয়ে আবেদন, নিবেদন কিংবা বিবেচনার আহ্বান জানাতেই পারেন। সেটা আপনার সাংগঠনিক অধিকার। তবে পার্টির স্বার্থে বিবৃতিতে উল্লেখিত আপনার প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি আপনিও পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন।’

রওশনকে আশ্বস্ত করে এরশাদ লিখেছেন, ‘আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে যাবে।’

চিঠিতে নিজের নেওয়া দুটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এরশাদ। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে আপনারও সম্মতি ছিল’।

নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়ে এরশাদ আরও লিখেছেন, কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির কোনো গঠনতান্ত্রিক পদ নয়। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের প্রয়োজনে তিনি কোনো পদ সৃষ্টি বা কাউকে কোনো বিশেষ দায়িত্ব দিতে পারেন। তিনি গঠনতন্ত্রের বহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বলেই এই সিদ্ধান্ত।

মহাসচিব পদে রদবদল প্রসঙ্গে এরশাদ রওশনকে লিখেছেন, ‘জিয়াউদ্দিন বাবলুকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মিডিয়ার কাছে আপনাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এটা ছিল দলকে বিভক্ত করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। সে কারণে,  বাবলুকে যে ধারা মতে মহাসচিব করা হয়েছিল- সেই ৩৯ ধারাতেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

এরশাদ আরও বলেন, ‘আপনি আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে অবগত আছেন যে, সংসদীয় কমিটি দলীয় নীতি-নির্ধারণের কোনো শাখা নয়। একমাত্র প্রেসিডিয়ামেরই পার্টির নীতি-নির্ধারণের এবং কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অনুমোদনের এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম বাদে অন্য কোনো শাখার মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই।’

এসএ/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।