আমাদের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৪৪: ফায়ার সার্ভিস
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , নিজস্ব প্রতিবেদক সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে
প্রকাশিত: ০৬:৫০ পিএম, ০৭ জুন ২০২২
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৪৪ জন, যার মধ্যে ১২ জন ফায়ার ফাইটার। ফায়ার সার্ভিসের নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে দ্রুত তাদের মরদেহ শনাক্ত করা হবে।
মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে ঘটনাস্থলে ব্রিফিং করেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা কত, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যুর তথ্য যদি বলি, তাহলে সেটা আমাদের হিসাবে ৪৪ জন। তাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ, ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রয়েছেন।’
আহতের সংখ্যা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৯৯ জন সাধারণ মানুষ গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। আহতের তালিকায় ফায়ার সার্ভিসের ১৫ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ফায়ার ফাইটার সুস্থ হয়ে এরই মধ্যে কর্মস্থলে ফিরেছেন। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তারা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। বাকি ১২ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী চট্টগ্রাম সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের মৃতের সংখ্যা ১২ জন। তার মধ্যে তিনজন এখনো মিসিং (নিখোঁজ)। তাদের বাবা-মায়ের স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তাদের পরিচয় ও মরদেহ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবো। আজকে দুজনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। আলামত দেখে মনে হচ্ছে, দুজনের মধ্যে একজন আমাদের সদস্য হতে পারেন। ডিএনএ টেস্টের পর আমরা নিশ্চিত হতে পারবো। আরেকজন সিকিউরিটির নেমপ্লেট ছিল। ধারণা করছি, তিনি ডিপোর কোনো ডিউটিতে ছিলেন।’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘কনটেইনারে কেমিক্যাল থাকার বিষয়টি মালিকপক্ষ এখনো আমাদের নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কনটেইনার সরাতে বলেছি। কাজ করতে গিয়ে যদি কনটেইনারের ভেতরে আগুন থাকে, তাহলে যতই বাইরে থেকে ফাইটিং করি তাতে কোনো লাভ হবে না। কনটেইনার ঠান্ডা না করলে যদি পরিমিত তাপ থেকে যায়, তাহলে ফের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সব দিক চিন্তা করে আমরা কাজ করছি।’
কনটেইনার সরানোর ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেমিক্যাল সরাতে গেলেও বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি আছে। এখানে কেমিক্যাল, গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ আছে। ফিনিশড গুডস জাতীয় বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। যেগুলো আগুনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। মালিকপক্ষকে বলা হয়েছে, সেগুলো যেন দ্রুত রিমুভ (সরানো) করা হয়। যাতে আবার দুর্ঘটনা না ঘটে।’
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত মর্মাহত, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন। শুধু ফায়ার সার্ভিস পরিবারের সদস্য নয়, আমাদের জাতি অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা মূলত ৪ জুন রাত ৯টা ১৫ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডে খবর পাই। খবর পাওয়ার পরপরই আমাদের নিকটস্থ কুমিরা ও সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তখন দুটি কনটেইনারের মধ্যে আগুন সীমাবদ্ধ ছিল। তারা সাধারণ আগুন মনে করে ফায়ার ফাইটিং করছিল।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিপো কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দেয়নি যে কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডি বা দাহ্য পদার্থ আছে, যা যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। মালিকপক্ষের সহযোগিতার অভাবে তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে গিয়ে কুমিরা ও সীতাকুণ্ডের আমাদের জনবল, অফিসার এবং গাড়ি সবই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।’
টিটি/এএএইচ/এমএস