কী কথা বলতে চেয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএম) এর ৩১১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন শয্যশায়ী জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ সুস্থ হয়ে উঠে সাংবাদিকদের কিছু কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের দুদিন আগে এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে শয্যাপাশে দাঁড়ানো স্ত্রী তাহমিনা মাহমুদ ও শ্যালক মাসুদ রেজা বার বার কি কথা তা বলার জন্য তাগাদা দিলেও তিনি মাথা নেড়ে না সূচক প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মাসুদ রেজা বলছিলেন, চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কাগজ লিখে দিচ্ছেন, দুলাভাইয়ের তেমন টাকা পয়সাও নেই। তার সুচিকিৎসা নিয়ে সকলেই চিন্তিত। এ কথা বলেই একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখালেন। আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী জানালেন, সেদিন রাতে এতটুকুও ঘুমাননি তার স্বামী। বার বার তাকে শোয়া অবস্থা থেকে ধরে বিছানায় বসাতে বলেছিলেন বলে জানালেন।
সারা রাত নির্ঘুম কাটালেও পরিচিতজন যারাই আসছিলেন তাদেরকে আপ্যায়নের জন্য স্ত্রীকে বলছিলেন। নিজে মারাত্মক অসুস্থ হলেও বার বার বলছিলেন, অনেক সাংবাদিকই তার চাইতে খারাপ অবস্থায় আছে। সাংবাদিকরা ভাল থাকলে তিনিও ভাল থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলছিলেন, নেত্রী ভাল থাকলে দেশ ভাল থাকবে।
ব্যাংকে মাত্র ১০ হাজার টাকা থাকলেও চিকিৎসাব্যয় নির্বাহ নিয়ে প্রকাশ্যে তাকে চিন্তিত দেখা যায়নি। হাসপাতালে আধা ঘণ্টা অবস্থানকালে তার মুখ থেকে বেশ কবার ইনশাল্লাহ ভাল হয়ে যাবো, স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে এ কথা বলতে শোনা যায়। মুখে কিছু না বললেও অর্থাভাব তাকে চিন্তিত করে তুলেছিল!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৎ ও নির্ভীক এই সাংবাদিকের চিকিৎসার্থে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে তার প্রয়োজন হতো ৫০ লাখ টাকা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুর পর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে নেতা সারাটি জীবন সাংবাদিক সমাজের জন্য কাজ করেছেন; যে নেতা বিএফইউজে’র সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন-সেই নেতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে অর্থের অভাব! নেতা চলে গেলেন- রেখে গেলেন গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য একরাশ লজ্জার পাহাড়।
সুস্থ হয়ে কী যেন সাংবাদিকদের বলতে চেয়েছিলেন জনপ্রিয় এই নেতা। কিন্তু মৃত্যুর কাছে পরাজিত হওয়ায় সে কথা আর অব্যক্তয়ই রয়ে গেল তার।
এমইউ/এসএইচএস/এমএস