বিস্ফোরণ আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছে শিশুরা
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , নিজস্ব প্রতিবেদক সীতাকুণ্ড থেকে
প্রকাশিত: ০৯:১৪ পিএম, ০৬ জুন ২০২২
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজন। আবার বিস্ফোরণ হতে পারে—এ আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছাড়ছেন। বিস্ফোরণ আতঙ্কে শিশুদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সোমবার (৬ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঘটনার প্রায় ৪৫ ঘণ্টা পরও ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। বিএম কনটেইনার ডিপোর আশপাশের গ্রাম ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বিএম কনটেইনার ডিপোর পাশের গ্রাম কেশবপুর। এ গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিস্ফোরণের পর থেকে তারা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন না। আবারও বিস্ফোরণ হতে পারে এমন আতঙ্কে শিশুদের আত্মীয়স্বজনদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কেশবপুর গ্রামের মালাপড়ার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি এশার নামাজ পড়ে ঘরে ফিরেছি। হঠাৎ বোমার মতো শব্দ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এমন বোমার আওয়াজ শুনিনি। বিস্ফোরণের শব্দের পর গ্রামবাসী দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। বিস্ফোরণের শব্দে ঘুমান্ত ছেলে-মেয়েরা ভয়ে জেগে ওঠে। বিস্ফোরণের শব্দে ভয়ে কেঁদে ওঠে আশপাশের বাড়ির শিশুরা। ঘটনার রাতে আমাদের কারও ঘুম হয়নি। এমনকি রোববার (৫ জুন) রাতেও ঘুম হয়নি।
তিনি বলেন, আবারও বিস্ফোরণ হতে পারে ছোট ছেলে-মেয়েদের অন্য গ্রামে আত্মীর বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
বিএম কনটেইনার ডিপোর উত্তরপাশে বাড়ি এনামুল হকের। তিনি বলেন, বিস্ফোরণ আতঙ্কে তিন ছেলে-মেয়েকে পাশের এলাকায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঘটনার রাতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার বাচ্চারা জানালার পাশে ঘুমাচ্ছিল। বিস্ফোরণের শব্দে জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে গেছে। এক বাচ্চার শরীর কেটে যায়। ভয়ে ওই রাতে আর ঘুম হয়নি কারও। এ কারণে রোববার ছেলে-মেয়েদের বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
পাশের বাড়ির সালেহা বেগম বলেন, বিস্ফোরণের পর থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার মেয়ে বার বার আঁতকে উঠছে। ভালোমতো ঘুমও হয় না ওর। ভয়ে দু’দিন ধরে স্কুলেও যাচ্ছে না।
এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর রাসায়নিকের কনটেইনারে একের পর এক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহুদূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।
অগ্নিকাণ্ড ও ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন। দগ্ধ ও আহত ১৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই শনাক্ত হওয়া নিহতদের জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস হোসেন চৌধুরী জানান, নিহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যও রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
টিটি/এমএএইচ/এএসএম