লিচুর বদলে বাবাকেই খুঁজে ফিরছে ছোট্ট ইসা
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ০৬ জুন ২০২২
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ইসা। শনিবারই বাবার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ইসাকে বাবা বলেছিলেন- ভালো করে লেখাপড়া করতে। ছেলেও আবদার করেছিলো লিচুর। কিন্তু বাবার সেই লিচুর অপেক্ষার প্রহর আর কোনো দিন শেষ হবে না ছোট্ট ইসার।
লিচুর বদলে এখন সে বড় বোন সায়মাকে নিয়ে বাবাকেই খুঁজে ফিরছে। বাবাকে শনাক্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এসেছে তারা। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেবে।
ইসা ঘটনার ভয়াবহতা পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও বোন সায়মা যেন ঠিকই বুঝেছে। তাই তার চাচা আনিসুল যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন পাশে দাঁড়িয়ে বারবার চোখ মুছছিল সায়মা।
শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকেই তাদের বাবা আবুল হাসেম নিখোঁজ। তিনি কাভার্ডভ্যানচালক ছিলেন। সেদিন রাতে ঢাকা থেকে পোশাক নিয়ে ডিপোতে এসেছিলেন।
নিখোঁজের বড় ভাই আনিসুল জানান, নুসরাত পরিবহন নামে একটি কোম্পানির কাভার্ডভ্যান চালাতেন হাসেম। ঘটনার দিন তাকে ফোন দিয়ে পোশাক নিয়ে বিএম ডিপোতে আসতে বলা হয়। এরপর শনিবার রাতে ঢাকা থেকে সেগুলো নিয়ে তিনি ডিপোতে আসেন।
আনিসুল বলেন, ওইদিন রাতে আমার ভাই ফোন করে ফোরম্যান এবং তার স্ত্রীকে আগুন লাগার খবর জানান। তখন স্ত্রী বলেছিলেন তাকে চলে আসতে। কিন্তু ভাই, কিছুক্ষণ পর আসছেন বলে জানান। ঘটনার দিন যে ছেলেটা ভিডিও করে আগুন দেখাচ্ছিল সেই ভিডিওতে আমার ভাইকে হাঁটতে দেখা গেছে। কয়েকবার তাকে হাঁটতে দেখেছি সেখানে। এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই।
নিখোঁজ হাসেমের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে সায়মা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সবার ছোট ছেলে মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
ডিএনএ নমুনা দিতে আসা ছোট ছেলে ইসা বলে, বাড়ি থেকে বাবা বের হওয়ার সময় বলেছিল ভালো করে পড়াশুনা করতে। এটাই বাবার সঙ্গে শেষ কথা।
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। অগ্নিকাণ্ড ও ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়ায়।
ইকবাল হোসেন/সায়ীদ আলমগীর/জেডএইচ/জেআইএম