ভাস্কর্যে গণহত্যা ও নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৫ পিএম, ২৯ মে ২০২২
‘রক্তস্নাত কসাইখানা শিরোনামে’ এই ভাস্কর্য তৈরি করেন শিল্পী মো. রবিউল ইসলাম। এতে ফুটে ওঠেছে গণহত্যার প্রতিচ্ছবি

দুই পা বাঁধা অবস্থায় শোয়ানো লোকটি। পাশে বসা আরও দুজন। তাদের একজন ওই লোকের এক হাত চেপে ধরেছে, আরেকজন অপর হাত হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে গলায় ছুরি চালাচ্ছে।

আরেক জায়গায় দেখা গেলো একটি মরদেহ। যার দুই পা ওপরে দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা। আরেকটি লাশ পড়ে রয়েছে সেই গাছের নিচে। তার ওপর বসে ঠুকরে ঠুকরে কলিজা খাচ্ছে একটি কাক।

jagonews24

এমনই বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে। যেখানে ফুটে ওঠেছে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের নির্যাতনের নির্মম চিত্র।

ভাস্কর্য দুটির প্রথমটি ‘রক্তস্নাত কসাইখানা শিরোনামে’ তৈরি করেন শিল্পী মো. রবিউল ইসলাম। আর দ্বিতীয়টি নির্মাণ হয় শিল্পী ফারজানা ইসলাম মিলকির হাতে। যার নাম ‘হত্যাযজ্ঞ ৭১’।

jagonews24

রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী কক্ষে হয় ভাস্কর্যের এই প্রদর্শনী। এর নাম দেওয়া হয় ‘গণহত্যা ১৯৭১ : পঞ্চ-ভাস্করের যাত্রা’। গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদর্শনী হয় এটির।

গত ২০ মে থেকে শুরু হয়ে ২৭ মে পর্যন্ত চলে প্রদর্শনী। এতে পাঁচজন ভাস্করের মোট ৩৮টি ভাস্কর্য স্থান পায়। নির্মিত ভাস্কর্যগুলো পিতল, অ্যালুমিনিয়াম, স্টোনওয়্যার, টেরাকোটা ও মিশ্র মাধ্যমে সৃষ্ট।

jagonews24

এর বাইরে গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি ও লেখক মুনতাসীর মামুনের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে শিল্পী হামিদুজ্জামানের ‘গণহত্যা’ এবং শিল্পী রোকেয়া সুলতানার ‘শহীদ সন্তান কোলে মা’ ভাস্কর্য দুটিও প্রদর্শনীতে স্থান পায়।

এছাড়া শিল্পী মো. রবিউল ইসলামের ‘অস্তিত্বের পরীক্ষা’, রেহানা ইয়াসমিনের ‘গণহত্যা যত্রতত্র-২’, ‘গণকবর’, ‘নারীর হাহাকার’, মুক্তি ভৌমিকের ‘শরণার্থী যন্ত্রণা’, সিগমা হক অংকনের ‘নারী মুক্তিযোদ্ধা’সহ একাত্তরের গণহত্যা ও নির্যাতনের এমন ৩৮টি ভাস্কর্য পায় স্থান।

jagonews24

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সব বয়সী দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখেন এসব ভাস্কর্য। ফরিদপুর থেকে আসা সাব্বির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গণহত্যার বিভিন্ন চিত্র ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এটা দেখে ভালো লাগছে। ইতিহাস যেন চোখের সামনে চলে এলো।

রাজধানীর মিরপুর থেকে মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে আসা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিয়া আহমদ নূহা বলেন, এখানে এসে বিভিন্ন ভাস্কর্য দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনেছি।

jagonews24

কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আসা ৬০ বছর বয়সী মো. আলমগীর সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১০ বছর। পাকিস্তানি আর্মিরা কত যে নির্যাতন করেছে সেটা নিজ চোখে দেখেছিলাম। সেই নির্যাতনের সবকিছু এখানে ভাস্কর্যের মাধ্যমে দেখলাম। দুঃসময়ের সব স্মৃতি এখানে এসে মনে পড়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি করে হত্যা, নারীর ওপর নির্যাতন সবকিছু এখানে আছে।

jagonews24

গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি সম্পাদক ড. শহীদ কাদের জাগো নিউজকে বলেন, গত পাঁচ দশকে দেশে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নানা মাধ্যমে কাজ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নিয়েও কাজ হয়েছে আলাদাভাবে, কিন্তু গণহত্যার বিষয়টি যেমন বিভিন্ন মাধ্যমে অবহেলিত ছিল, ঠিক তেমনি ভাস্কর্য কিংবা চিত্র এসব মাধ্যমে উপস্থিত হয়নি। আমরা প্রথমবারের মতো এখানে এই প্রদর্শনী করেছি।

jagonews24

গণহত্যার ইতিহাস সংরক্ষণ ও গবেষণা করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ১৭ মে যাত্রা শুরু করে গণহত্যা জাদুঘর। বহু গবেষণামূলক ও সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে আট বছর পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আরএসএম/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।