প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া আ’লীগ নেতার বক্তব্য ভাইরাল
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশিদ রাসেলের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শুক্রবার (২৭ মে) বিকেলে ছনহরা ইউনিয়নের আলমদার পাড়া বায়তুশ শরফ মসজিদ প্রাঙ্গণে তার পিতা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলমের স্মরণসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতিকে নিয়ে তিনি উত্তপ্ত বক্তব্য দেন। এসময় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সাবধান হতে বলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ রাসেল বলেন, ‘রশিদ সাবরে আই বুড়া আঙুল দেহাই হইত পাইরগুম। রশিদ সাব তুঁই আইযু রাসেলরে নঁ চিনঅ। রাসেলরে আইযু নঁ চিনঅ রশিদ সাহেব। তুঁই রশিদ কীভাবে ছনহরা ইলেকশনত দিন রাসেলল্লয় ইলেকশন গরঅ আই চায় থাইক্কুম। তুঁই একমাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধারে অপমান গইরগ, আঁর এলাহার মানুষুরে অপমান গইরগ, আই রাসেল কিন্তু চাইরতাম নঁ। রশিদ সাব আই কিন্তু চাইরতাম নঁ। রাসেল কিন্তু সোজা আঙুলে ঘি...কিন্তু সাবধান।’
তিনি বলেন, ‘রশিদ সাব আজকে থেকে সাবধান হয়ে যান। মিস্টার রশিদ আপনে আজকে থেকে সাবধান হয়ে যান। আপনি যে কাজ করছেন, পুনরায় এ কাজ যদি আপনি করতে যান, আপনার অবস্থা কিন্তু আমি বারোটা বাজাই ছাড়বো। আমাদের অবস্থান কিন্তু আপনি এখনো জানেন না। এবার জানবেন, আপনি হাড়ে হাড়ে বুঝবেন। আমার মুরব্বিদের অপমান করছেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করছেন, আমি আদর্শবান বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কিন্তু একবিন্দু পর্যন্ত ছাড় দেবো না তোমারে, এটা মনে রাখবেন। রশিদ সাহেব, সামনে ইলেকশন, সুন্দরভাবে ইলেকশন করতে আসেন, ভদ্রভাবে ইলেকশন করতে আসেন। এর মধ্যে যদি কিছু অকারেঞ্জ করতে চান, এইবার দাতভাঙা জবাব দেবো।’
তিরি আরও বলেন, ‘রাসেল কী জিনিস এবার আপনি হাড়ে হাড়ে বুঝবেন। আমি কী জিনিস, আমার এমপি সাব জানেন। আমি কী জিনিস মোতাহের নানা (উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী) জানেন। আমি কী জিনিস আমার মফিজ সাব (দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) জানে, আমি কী জিনিস, বিপ্লব বড়ুয়া জানেন। কিন্তু এইবার আপনি হাড়ে হাড়ে বুঝবেন, আপনার মতো কতো রশিদরে...। এগুলো কিন্তু আমি ধার ধারি না, এগুলো আপনি বুঝবেন।’
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতি জাগো নিউজকে বলেন, মামুনুর রশিদ রাসেল আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তার পিতার স্মরণসভা থেকে তিনি আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আমি বিষয়টি মৌখিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এ বিষয়ে শনিবার (২৮ মে) বিকেল ৩টায় নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতি আমার প্রয়াত পিতাসহ স্থানীয় মুরব্বিদের নিয়ে নানা কটূক্তি করেছেন। কোন ধরনের কটূক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার (আবদুর রশিদ দৌলতি) বিষয়ে ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের কাছেও রিপোর্ট রয়েছে। কটূক্তির নানা ডকুমেন্ট তার হাতে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এর আগে গত ১৯ মে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে ক্রেডিট কার্ডের ঋণখেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হয় মামুনুর রশিদ রাসেলের। পরে উচ্চ আদালত রায়ে মনোনয়ন ফিরে পান তিনি। ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। মামুনুর রশিদ রাসেল, আবদুর রশিদ দৌলতি বাদেও নির্বাচনে মো. সাহাবুদ্দিন, মো. জাহিদুল হক নামের আরও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবদুর রশিদ দৌলতী এর আগে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছনহরা ইউনিয়নে কেন্দ্র দখল করে ভোট নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়। পরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতি আরও ৩টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর আবদুর রশিদ দৌলতি উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা করেন।
পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিত ২টি কেন্দ্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম বিজয়ী হলেও আবদুর রশিদ দৌলতি তা প্রত্যাখান করে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। ওই মামলায় উচ্চ আদালত গেজেট স্থগিত করেন। গত ২৫ মার্চ এই ইউনিয়নে বিজয়ী চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মারা যান। যে কারণে সেখানে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৫ জুন সেখানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইকবাল হোসেন/ইএ/এএসএম