এবার লাগাতর কর্মবিরতিতে কলেজ শিক্ষকরা
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরলেও এবার লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। শুক্রবার রাজধানীর নায়েম ভবনে বৈঠক শেষে এমনটিই জানিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা।
সূত্র জানায়, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় পদমর্যাদা ও বেতনক্রম অবনমনসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরকারকে তিন দফা সময় দিয়ে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা। এরপরেও দাবি আদায় না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে লাগাতর কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা জানান, শিক্ষা ক্যাডারের পদসমূহ ২য় ও ১ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়টি অষ্টম পে-স্কেলে নেই। এর আগে শিক্ষা ক্যাডারের ৫ম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকরা পদোন্নতি পেয়ে ৪র্থ গ্রেডের অধ্যাপক হতেন। সেখান থেকে ৫০ শতাংশ অধ্যাপকরা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হতে পারতেন। কিন্তু নতুন বেতন কাঠামোতে এ বৈষম্য নিরসন করে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্য থেকে গ্রেড-১ নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। অথচ উল্টো সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় অধ্যাপকদের ৪র্থ গ্রেড হতেই ‘অসম্মানজনকভাবে’ অবসরে যেতে হবে।
এছাড়া অষ্টম পে-স্কেলের অসঙ্গতি দূরসহ নায়েম মহাপরিচালক, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা সদরের অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদকেও গ্রেড-১ এ উন্নীত, মাউশি, নায়েম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক, অনার্স/মাস্টার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ, শিক্ষা বোর্ডের সচিব এবং এনসিটিবির সদস্যদের পদকে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীত, অনার্স ও মাস্টার্স রয়েছে এমন বিভাগে দ্বিতীয় গ্রেডের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি এবং বিকল্প ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখার দাবিতে কয়েক মাস ধরে মানববন্ধন, অবস্থান ও কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন দেশের ৩০৬টি সরকারি কলেজের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক।
দাবি পূরণে সরকারকে গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও দাবি আদায় না হওয়ায় ৪ ও ৫ জানুয়ারি পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। পরে ১১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন।এতেও দাবি আদায়ে সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আশ্বাস দেয়া হলেও আমাদের ব্যাপারে কোনো আশ্বাস পাইনি। শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে সরকারকে যথেষ্ট সময় দেয়া হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তাই দাবি পূরণে দেশের সরকারি কলেজ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিদের মতামতে ভিত্তিতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগম জাগো নিউজকে বলেন, নতুন বেতন কাঠামোতে অধ্যাপকদের পদমর্যাদা ও বেতনক্রমের অবনমন করা হয়েছে। দাবি পূরণে ২৫ জানয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৬, ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এতেও দাবি পূরণের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হবে । সে সময়ের মধ্যেও যদি দাবি পূরণ না হয় তাহলে ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবার ক্লাস বর্জন, পরে একদিন সময় দিয়ে ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হবে। এরমধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৩ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি শাটডাউন করে পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতর ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হবে।
উল্লেখ্য, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা কর্মবিরতির আন্দোলনে নামলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজগুলোর অন্তত ২৬টি পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
এনএম/এএইচ/এমএস