বছরে ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। দুর্ঘটনা রোধে ও সড়কে মৃত্যু কমাতে জনসচেতনতা তৈরিসহ নীতি-নির্ধারণী পর্যয়ে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান।
সোমবার (১৬ মে) ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে ‘নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে এ আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও বর্তমান ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর গ্যাপগুলোর সুপারিশ ও বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় দুই ও তিন চাকার মোটরযান ব্যবহারকারীদের জন্য মাথার আঘাত মৃত্যুর প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। তারা বলছে, মোটরসাইকেল চালকরা সঠিক হেলমেট ব্যবহারে দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে এবং মাথার আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে।
এছাড়া চার চাকার মোটরযানের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে সিটবেল্ট পরা চালক ও সামনের আসনে যাত্রীর মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি ৪৫-৫০ শতাংশ এবং পেছনের আসনের যাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব।
মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি অফিসার (পলিসি) ডা. তাসনিম মেহবুবা বাঁধন ও অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন) তরিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা। মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তার প্রবন্ধে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচটি রিস্ক ফ্যাক্টর তুলে ধরেন। যার মধ্যে অন্যতম গতি।
বক্তারা বলেন, প্রতিবছর বিশ্বে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেফটি ২০১৮’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ থেকে ২৯ বছর বয়সসীমার মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব মৃত্যুর ৯০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে সংঘটিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনার একাধিক কারণ রয়েছে। তবে সড়কে পাঁচটি মূল আচরণগত ঝুঁকির পরিবর্তন দুর্ঘটনা হ্রাসের সহায়ক হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
তারা বলেন, যতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত/দ্রুতগতিতে মোটরযান চালানোর বিষয়টি সম্পর্কিত। যদি গতি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব। তেমনি মদ্যপ অবস্থায় বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে মোটরযান পরিচালনাও সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি আঘাতের তীব্রতা এবং সেই দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। যদি মদ্যপ অবস্থায় মোটরযান চালানো নিষেধ বিধানটি শতভাগ প্রয়োগ করা যায় তাহলে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০ শতাংশ হ্রাস করা যাবে।
বক্তারা আরও বলেন, হেলমেট পরিধান সরাসরি দুর্ঘটনার ঝুঁকির উৎস নয় তবে দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতে হার হ্রাসে ভূমিকা পালন করে। সঠিক হেলমেট ব্যবহারে দুর্ঘটনায় মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে এবং মাথার আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে। সিটবেল্ট পরা চালক ও সামনের আসনে যাত্রীর মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি ৪৫-৫০ শতাংশ এবং পেছনের আসনের যাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস করে। শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু যাত্রীদের বিশেষ করে বেশি ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ এবং বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ৫৪-৮০ শতাংশ মারাত্মক আঘাত পাওয়া এবং মৃত্যু হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকর।
সভায় জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময়, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক নুরুল আমীন, সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদক বকুল আহমেদ, ইত্তেফাকের নিজস্ব প্রতিবেদক জামিউল আহসান শিপু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক আলী আজম, কালেরকন্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক রেজওয়ান বিশ্বাস, মানবজমিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শুভ্র দেব, জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ফজলুর রহমান, ভোরের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদক ইমরান রহমান, ঢাকাপোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মনি আচার্য, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নিজস্ব প্রতিবেদক আসাদুল্লাহ লায়ন ও বাংলা টাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
টিটি/কেএসআর