উপসচিব বলে কথা


প্রকাশিত: ০৩:৩২ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গেড়াখোলা গ্রামের নিরীহ জনগণ সরকারের এক উপসচিবের লোকজনের অত্যাচার, নিপীড়ন ও দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
 
সাধারণ মানুষের সম্পত্তি জবরদখল, গাছপালা কেটে নেয়া ও মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন জলাশয় ও পুকুর দখল করে মাছ চাষ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে শনিবার সকালে কাশিয়ানী থানায় গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা (নং-১১/২০১৬) দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ছিয়ারনন্নেসা বেগম।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহসড়কের পাশে সরকারি জায়গা ও জলাশয় দখল করে মৎস্য চাষ প্রকল্পের নামে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারের উপসচিব ও বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক নলিনী রঞ্জন বসাক ও তার লোকজন। এখন তারা ওই এলাকার আতঙ্ক। তাদের ভয়ে এলাকার নিরীহ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি প্রশাসন ও পুলিশের কথা বলে তারা জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছেন। বিভিন্ন সময় তাদের অবৈধ ও অনৈতিক কাজে বাধা দিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের হাতে হেনস্তা ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। ফলে তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।

গেড়াখোলা গ্রামের মোক্তার হোসেন তালুকদারের স্ত্রী ছিয়ারনন্নেছা বেগম জাগো নিউজকে জানান, ওই  উপসচিবের লোকজন সম্প্রতি তার উপস্থিতিতে আমার বাগান খেকে প্রায় শতাধিক মেহগনি গাছ কেটে ফেলে যায়। ফলে তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। এ গাছ বড় হলে সে টাকা দিয়ে  সংসারে উন্নতি করবেন এই ছিল তার স্বপ্ন। কিন্তু এখন তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

তিনি এ ব্যাপারে কাশিয়ানী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলেও অভিযুক্ত লোকজন উপসচিবের পক্ষের লোক হওয়ায় পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি তাদের বিরুদ্ধে। বরং বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে তাকে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। ফলে তিনি  নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

গোড়াখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক ফিরোজ মোল্লা (৪০) অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, উপসচিব নলিনী রঞ্জন বসাক এলাকায় স্বেচ্ছাচারি ভূমিকা পালন করে চলছেন। উনার অন্যায় কাজ কর্ম কেউ পছন্দ না করলে তিনি তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবহার করেন।

গেড়াখোলা মধ্যপাড়া গ্রামের শুকুর মোল্লার স্ত্রী দোলেনা বেগম (৩৫) অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় আট বছর আগে আমার ভাই লুৎফারের কাছ থেকে তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২৫ হাজার টাকা নেন নলিনী বাবু। কিন্তু আজও তা ফেরত দেননি এবং চাকরিরও কোনো ব্যবস্থা করেননি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি ধামকি দিয়ে ফিরিয়ে দেন।

ওই গ্রামের কৃষক শামীম মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, ঢাকা-খুলনা মহসড়কের পাশে জলাশয়ে মাছ  চাষের কথা বলে তিনি তা দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছেন না। স্থানীয় পাট চাষিরা সেখানে পাট জাগ দিতে গেলে তার লোকজন তাতে বাধা দেন। তিনি প্রায়ই এলাকায় এসে লোকজনকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে যান। যেন তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা না হয়। এছাড়া তিনি মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ এলাকায় ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষের চাষাবাদ করার কথা বলে দখল করে নিলেও কিছুই করেননি সেখানে। অন্যরা কিছু করতে গেলে তাতে তার লোকজন বাধা দেন এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেন।

গেড়াখোলা গ্রামের শুকুর আলী বলেন, মৎস্য চাষ ও বৃক্ষরোপণের নামে ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে বিভিন্ন  মন্ত্রণালয় ও দাতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে তা আত্মসাত করেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে। এলাকায় তিনি বর্ণালী সাংস্কৃতিক সংঘ নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা  করলেও সেখানে সাংস্কৃতিক কোনো কর্মকাণ্ড চলে না। নেশাখোর ও জুয়াড়িদের আড্ডা বসে সেখানে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এটাই তার প্রত্যাশা।

উপসচিব ও বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক নলিনী রঞ্জন বসাকের সঙ্গে কথা বললে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, আমি ওই এলাকার সন্তান। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। এলাকার মানুষের উন্নয়নে আমি কাজ করি। সবাইকে আমি হয়তো খুশি করতে পারি না। তাই যারা আমার থেকে বঞ্চিত তারা এসব অভিযোগ করলেও করতে পারেন।
 
এ ব্যাপারে কাশিয়ানি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, গাছ কেটে ফেলার  অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।

এস এম হুমায়ূন কবীর/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।