এনসিটিবির কালোতালিকায় পাঠ্যবই ছাপানো ২৬ প্রেস
নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই দিতে না পারায় ২৬ প্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অপরাধ অনুযায়ী তাদের এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে এনসিটিবি। এই সময়ে বিনামূল্যের কোনো বই ছাপানোর কাজ পাবেনা প্রেসগুলো।
রোববার (৮ মে) এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) মো. মশিউজ্জামান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতারের সই করা চিঠি দিয়ে শাস্তির মুখে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মশিউজ্জামান বলেন, দরপত্র অনুযায়ী যারা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২৮ দিনের বেশি দেরি করে পাঠ্যবই ডেলিভারি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এক বছর থেকে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এসব প্রেসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এই সময়ের মধ্যে এনসিটিবির কোনো দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না তারা।
তিনি আরও বলেন, যারা দেরি করে বই দিয়েছে, বর্তমানে আমরা শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। কয়েকটি প্রেসকে অঙ্গীকারনামা নিয়ে জরিমানা আদায় করে মাফ করে দেওয়া হয়েছে।
বইয়ের মানের বিষয়ে প্রাইমারি ইন্সপেকশন এজেন্টের (পিএলআই) রির্পোট পাওয়ার পর বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতি বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয় সরকার। তবে চলতি বছর সময়মতো বই দেওয়া যায়নি। এবার বই ছাপার কাজের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে হয়েছিল। এ জন্য সময়মতো বই দেওয়া নিয়ে আগেই আশঙ্কা করেছিলেন সংশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এরই মধ্যে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলার কারণে বই ছাপার কাজে আরও দেরি হয়। ফলে সব শিক্ষার্থী সময়মতো বই হাতে পায়নি। এ বছর মোট সোয়া ৪ কোটি শিক্ষার্থীকে ৩৪ কোটি ৭০ লাখের বেশি পাঠ্যবই বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাস্তির মুখে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্র অনুযায়ী পাঠ্যবই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দরপত্রের সময়ের চেয়ে অস্বাভাবিক দেরি করেছে। ২৯ দিন বা তারও বেশি দিন দেরি করা প্রতিষ্ঠানগুলো শাস্তির মুখে পড়েছে। আর নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২৮ দিন পর্যন্ত যারা দেরি করেছে, সেগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, দেরি করা প্রেসগুলোর বিরুদ্ধে শুধু এনসিটিবি ব্যবস্থা নিয়েছে। যারা প্রতিবছর নাম পরিবর্তন করে কাজ পাচ্ছে এ তালিকায় তারাই রয়েছে। অথচ যারা শিক্ষার্থীর হাতে নিম্ন মানের বই তুলে দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের ২০টি উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করে আমরা তা ল্যাবে পরীক্ষা করে নিউজপ্রিন্ট ও নিম্ন মানের কাগজ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। সে প্রতিবেদন এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
‘পিএলআই পরিদর্শনের নামে অর্থ নিয়ে অযোগ্য প্রেসগুলোকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে। তাদের দ্বারা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
যারা অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে, তারা কি সেসব প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তুলে ধরবে, প্রশ্ন তোলেন তোফায়েল খান। এ সময় ৩য় পক্ষের মাধ্যমে সরেজমিনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বই এনে যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
১৭টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৫১ দিনের বেশি সময় পর বই দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০২২-২৩) থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর এনসিটিবির বই ছাপার দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। প্রেসগুলো হলো- ঢাকার অক্ষর বিন্যাস প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, সেডনা প্রিন্টিং প্রেস আ্যান্ড পাবলিকেশনস, প্লাসিড প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজেস, মনির প্রেস আ্যান্ড পাবলিকেশনস, আবুল প্রিন্টিং, মেসার্স টাঙ্গাইল প্রিন্টার্স, হক প্রিন্টার্স, মেসার্স নাজমুন নাহার প্রেস, বনফুল আর্ট প্রেস, পিবিএস প্রিন্টার্স, ওয়াল্টার রোডের শিক্ষা সেবা প্রিন্টার্স, আমাজান প্রিন্টিং, উজ্জ্বল প্রিন্টিং প্রেস, বুলবুল আর্ট প্রেস, প্রেস লাইন, নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুরের এইচ আর প্রিন্টার্স আ্যান্ড পেপার সেলার ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মহানগর অফসেট প্রিন্টিং প্রেস।
এছাড়া তিন বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত প্রেসগুলো হলো- ঢাকার ইউসুফ প্রিন্টার্স ও বগুড়ার শরীফা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস। অন্যদিকে, দুই বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে ঢাকার জিতু অফসেট প্রিন্টিং প্রেস, ন্যাশনাল প্রিন্টার্স এবং আর এম দাস রোডের ওয়েব টেক প্রিন্টার্সকে। এক বছরের জন্য কালোতালিকাতুক্ত করা হয়েছে ঢাকার বাকো অফসেট প্রেস, দিগন্ত অফসেট প্রেস, এ বি কালার প্রেস ও মেসার্স প্রিন্ট প্লাসকে।
এদিকে, অঙ্গীকারনামা (৩০০ টাকার স্টাম্পে) দিয়ে ছাড় পেয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো- ঢাকার সোমা প্রিন্টিং প্রেস, রাব্বিল প্রিন্টিং প্রেস, মেরাজ প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস, লেটার এন কালার লিমিটেড, সমতা প্রেস ও কাশেম অ্যান্ড রহমান প্রিন্টিং প্রেস।
এমএইচএম/এমপি/এমএস