জলঢাকায় পাল সম্রাট ধর্মপালের নিদর্শনের সন্ধান


প্রকাশিত: ০২:২৩ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

নীলফামারীতে এই প্রথম প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। জলঢাকা উপজেলার গড় ধর্মপাল ইউনিয়নের পূর্ব খেরকাটি নামক স্থানে এর সন্ধান পেয়েছে সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

খনন কাজ শুরুর দিন পর সোমবার পাল সম্রাট ধর্মপালের প্রত্নতত্ত্বের সন্ধান মেলে। এছাড়াও খনন এলাকা থেকে দুইশত গজ দূরে সবুজপাড়া নামক স্থানে আরেকটি প্রত্নতত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। যেটির খনন কাজ আর কিছু দিনের মধ্যে শুরু করা হবে।

প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের সন্ধান পাওয়ার পর সেখানে নেমে আসে হাজারো মানুষের ঢল। উৎসুক জনতা এক নজর দেখার জন্য অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ভিড় করছে।

এর আগে এলাকাবাসীর আবেদনে স্থানটিতে ১৯৯০ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খনন কাজ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু তারা সফলতা পায়নি। এবার বিষয়টি হাতে নিয়েছে সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, পাল সম্রাট ধর্মপাল ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলের পাল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শাসক। তিনি ছিলেন পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের ছেলে ও উত্তরাধিকারী। পৈত্রিক রাজত্বের সীমানা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি পাল সাম্রাজ্যকে উত্তর ও পূর্ব ভারতের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেন।

ধর্মপালের সুদীর্ঘ রাজত্বকালের (আনু. ৭৮১-৮২১ খ্রি.) সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ। উত্তর ভারতের মধ্যদেশে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট এবং মালব ও রাজস্থানের গুর্জর-প্রতীহারদের সঙ্গে বাংলার পালগণ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

ললিতাদিত্য ও যশোবর্মণের বিজয়াভিযানের পর উত্তর ভারতের মধ্যমণি কনৌজে শূন্যস্থান পূরণের জন্য উল্লিখিত তিন শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ধর্মপাল উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার মতো যথেষ্ট শক্তির অধিকারী বলে নিজেকে মনে করেন এবং এক্ষেত্রে তিনি কিছু সাফল্যও অর্জন করেন।

nillfamari
পাল রাজা ধর্মপাল এবং প্রতীহার রাজা বৎসরাজের মধ্যে সংঘর্ষের মাধ্যমে ৭৯০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের প্রথম পর্ব শুরু হয়। এতে প্রথমোক্তজনের পরাজয় ঘটে এবং পরে উভয়েরই অভিন্ন শক্র দাক্ষিণাত্য থেকে আগত রাষ্ট্রকূট রাজা ধ্রুবধারা বর্ষের হাতে দুইজনেই পরাজিত হন। সে সময় থেকে নীলফামারীর ওই স্থানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।

ধীরে ধীরে সেখানকার অবকাঠামোগুলো মাটির নিচে তলিয়ে যেতে থাকে। তার নাম অনুসারে এলাকাটির নাম গড় ধর্মপাল হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। এদিকে, চলমান খনন কাজে  ধর্মপাল গড়ের দুর্গ প্রাচীরগুলো আবিষ্কার করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে যাচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সোমবার স্থানটিতে পরিদর্শন করেছেন নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা, রাজশাহী বিভাগের আলোক চিত্রকর আবুল কালাম আজাদ, লোকমান হোসেন প্রমুখ।

খননকাজে নিয়োজিত বগুড়ার মহাস্থানগড়ের দলনেতা মুজিবুর রহমান বলেন, কেবল খনন কাজের সফলতা উঠে আসতে শুরু করেছে। আশা করছি পাল সম্রাট ধর্মপালের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। এটি পূণাঙ্গরূপে সফলতা পেলে ধর্মপাল এলাকাটি আলোকিত হয়ে উঠবে। আর সে লক্ষে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

জাহেদুল ইসলাম/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।