ফসলে লেদাপোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক
আবহাওয়া ভালো থাকায় নওগাঁয় চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে রবি শস্যের চাষ করা হয়েছে। জেলায় রবি ফসল ভালো হলেও আত্রাই উপজেলায় লেদাপোকার আক্রমণে শত শত বিঘা জমিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় আলু ২৩ হাজার ২শ’ হেক্টর, সরিষা ৩৪ হাজার ৭৩২ হেক্টর, ভুট্টা ৫ হাজার ১২৬ হেক্টর, গম ২৫ হাজার হেক্টর, মসুর ডাল প্রায় ১শ’ হেক্টর, পেঁয়াজ ১শ’ হেক্টর, অন্যান্য সবজি ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। জেলায় রবি মৌসুমে বাম্পার ফল আশা করা হলেও আত্রাই উপজেলাতে শত শত বিঘা জমিতে দেখা দিয়েছে লেদাপোকার আক্রমণ।
জানা গেছে, গত বছর জেলার তিন উপজেলা আত্রাই, রাণীনগর ও মান্দায় বন্যা প্রায় দেড় মাস স্থায়ী হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই তিন উপজেলায় প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে রবি শস্য আলু, সরিষা, ভুট্টা, ডাল, গম, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয় ।
এর মধ্যে শুধু আত্রাই উপজেলাতেই ১২ হাজার হেক্টর জমিতে রবি শস্য চাষ করা হয়। রবি শস্যে পঁচানি, শুকিয়ে যাওয়া কোনো রোগ দেখা না দিলেও রবি মৌসুমের শুরু থেকে উপজেলার আদশগ্রাম, মির্জাপুর, ভবানীপুর, রসুলপুর, হাতিয়াপাড়া, মাগুড়াপাড়া, কয়সা, আকবরপুরসহ ১০/১২টি গ্রামের মাঠে শত শত বিঘা জমিতে লেদাপোকার আক্রমণে দেখা দেয়।
বিঘার পর বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। কোনো কিটনাশক দিয়ে লেদাপোকা দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। লেদাপোকার আক্রমণে সরিষা, ডাল, আলু, গমের জমিতে বেশি ভাগই কোনো আবাদ নেই । অনেক কৃষক কচি গম, আলু, সরিষা কেটে গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে।
আত্রাই উপজেলার আদর্শগ্রামের গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, এবার ৩২ কাঠা জমিতে মসুর ডাল আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মতো। ফসল ভালো হলেও লেদাপোকার আক্রমণে জমিতে কোনো মসুর ডাল নেই। এখন ভাবছেন অন্য ফসল আবাদের।
একই গ্রামের কৃষক আজাদ হোসেন বলেন, লেদাপোকার আক্রমণে অনেক কৃষক তাদের লাগানো গম, আলু, সরিষা, ভুট্টা কেটে গরুর খাদ্য করছেন।
আকবরপুর গ্রামের রেজাউল করিম জানান, তার মতো ওই এলাকার শত শত কৃষকের জমিতে সরিষার গাছে ফল এসেছে। কিন্তু ফলের মধ্যে থাকা সরিষার দানা লেদাপোকা সব খেয়ে ফেলেছে। এসব কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে খরচের ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার একটি টাকাও ঘরে তুলতে পারবেন না।
হাতিয়াপাড়ার গোলাম জানান, লেদাপোকাগুলো রাতে মাটির নিচ থেকে বের হয়। সারা রাত ফসল খেয়ে সূর্য উঠার আগে আবার মাটির নিচে চলে যাওয়ায় পোকা দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বৃদ্ধ আহসান মৃধা, আজাদ হোসেন, ছালাম জানান, লেদাপোকার আক্রমণের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে গেলেও শুধু পোকা দমনের জন্য ওষুধের নাম লিখে দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠে কোনো কৃষি কর্মকর্তা একবারও দেখতে বা পরামর্শ দিতে আসেননি। এই কারণেই দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
ভবানীপুর গ্রামের সমুন সরকার জানান, চলতি রবি মৌসুমে শত শত কৃষক তাদের ফসল লেদাপোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসবেন ।
এদিকে আগামীতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কিভাবে চাষ করবেন এখন এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি সরকারের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানান।
আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আব্দুল আজিজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চলতি রবি মৌসুমে লেদাপোকার আক্রমণের ঘটনায় তার কাছে কেউ কোনো পরামর্শ নিতে আসেননি। তিনি আরও দাবি করেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় ও কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় নওগাঁয় চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে রবি শস্যের চাষ করা হয়েছে। ফসলে লেদাপোকার আক্রমণে ক্ষতি হওয়ার ঘটনা জানতে পেরে ফসল রক্ষার জন্যে কৃষি কর্মকর্তাদের ইত্যেমধ্যে দ্রুত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্তব্যের অবহেলার অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আব্বাস আলী/এসএস/আরআইপি