বায়তুল মোকাররমে ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল
করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর কড়াকড়ি বিধিনিষেধের আওতায় মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। মানতে হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। তবে মহামারি পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শিথিল। এ কারণে এবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে।
মঙ্গলবার (৩ মে) ফজরের নামাজের পর রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়তে বায়তুল মোকাররমে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশের এলাকা মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে।
বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৭টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মসজিদে প্রবেশে সাড়ে ৬টার দিকেই মুসল্লিদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। দক্ষিণ গেট দিয়ে লাইন ধরে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করেন।
মুসল্লিদের সারি মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পর্যন্ত চলে যায়। প্রবেশ গেটে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর দেখা গেছে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত হয়। প্রথম জামাত শুরু হয় সকাল ৭টায়। এতে ইমাম ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. ইসহাক।
প্রথম জামাত সকাল ৭টা ২৭ মিনিটে শেষ হয়। প্রথম জামাত চলাকালীন বিপুল সংখ্যক মুসল্লি দক্ষিণ গেটের বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রথম জামাত শেষ হলে মুসল্লিরা দুটি আর্চওয়ে দিয়ে হুড়মুড় করে প্রবেশ করতে থাকেন। মুসল্লিদের চাপে আর্চওয়ের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। একপর্যায়ে আর্চওয়ে দুটি সরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাত, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে শেষের দুটি জামাতের মুসল্লিরা ভোগান্তিতে পড়েন।
দ্বিতীয় জামাত চলাকালে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। মুসল্লিদের চাপে দক্ষিণ গেটের সামনের সড়কটি একপর্যায়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের খাদেম বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘ফজরের পর থেকেই মুসল্লিরা জামাতে অংশ নিতে আসতে থাকেন। মসজিদে একসঙ্গে ৪২ হাজার মুসল্লির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রথম জামাতে মসজিদ কানায় কানায় ভরে গেছে। বাইরে অনেকে অপেক্ষায় ছিলেন।’
প্রথম জামাত শেষে অনেক মুসল্লিকে কোলাকুলির মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। এক-একটি জামাত শেষে মুসল্লিদের মসজিদের মধ্যে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
রায়েরবাগ এলাকা থেকে আট বছরের ছেলে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে জামাতে এসেছেন শওকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম জামাতে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ৭টায় এসে দেখি মসজিদ ভরা, শত শত মানুষ গেটের বাইরের দাঁড়িয়ে আছেন। তাই প্রথম জামাতে নামাজ পড়তে পারিনি। দ্বিতীয় জামাতে নামাজ পড়লাম।’
নবম শ্রেণিতে পড়া মাহাথির নামাজ পড়তে এসেছে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে। সে বলে, ‘খুব ভালো লাগছে। করোনা নেই, সবাই একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে পারছি।’
মাতুয়াইল মেডিকেল এলাকা থেকে বাবার সঙ্গে ছোট ভাইকে নিয়ে এসেছেন ১১ বছর বয়সী শৈশব। শৈশব বলে, ‘বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়ে আনন্দ লাগছে। প্রথমবারের মতো আসলাম। অনেক বড় মসজিদ।’
যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা থেকে ৭০ বছর বয়সী এম এ মালেকও ছেলের সঙ্গে এসেছেন নামাজ পড়তে। তিনি বলেন, ‘বেশি মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়ার একটা আনন্দ আছে। এ আনন্দের দিনে সবার সুখ-শান্তি কামনা করি, দেশের সমৃদ্ধি কামনা করি। মহামারি দূর হয়ে যাক।’
মোনাজাতে গুনাহ মাফসহ রমজানের রোজা-নামাজ কবুল করে নেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো হয়। এছাড়া নির্যাতিত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়। দেশের সমৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করা হয়।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম ছিলেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররমের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
সকাল ৯টার তৃতীয় জামাতের ইমাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। খাদেম হাফেজ মো. নাছির উল্লাহ এই জামাতের মুকাব্বির ছিলেন।
চতুর্থ জামাত হয় সকাল ১০টায়। এ জামাতে নামাজ পড়ান বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হয় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। এতে ইমাম ছিলেন বায়তুল মোকারমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দিন কাসেম। খাদেম মো. রুহুল আমিন ছিলেন মুকাব্বির।
আরএমএম/এমকেআর/এমএস