১১২ দিনেও খোঁজ মেলেনি অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুলের
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে গত ৭ জানুয়ারি নিখোঁজ হন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় প্রথমে নজরুলের স্ত্রী যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
পরে খোঁজ না পেয়ে ঘটনার ১০৮ দিন পর মামলা করেন। মামলায় তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অপরহণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পুলিশ বলছে, ইমিগ্রেশনে খোঁজ নেওয়া হয়েছে কিন্তু নজরুলের দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো তথ্য মেলেনি।
নিখোঁজ হওয়ার পর উত্তরখান ও যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ যৌথভাবে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা ইউনিটও তদন্তে নামে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিখোঁজের আগে নজরুল গত ৬ জানুয়ারি শেষবারের মতো অফিস করেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক মতিঝিলের বি-ওয়াপদা শাখার সিনিয়র অফিসার ও লকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ওই দিন বিকেলে তিনি অফিস শেষে তার সহকর্মীর কাছে লকারের চাবি রেখে যান।
এ বিষয়ে শাখা ম্যানেজার পুলিশকে জানায়, নজরুল একজন হাসিখুশি মানুষ। তিনি কখনওই অন্য কারো কাছে ব্যাংকের লকারের চাবি দিতেন না। ছুটিতে থাকলেও এসে চাবি দিয়ে কাজ করিয়ে আবার নিয়ে যেতেন।
‘কিন্তু সেই মানুষ চাবি ব্যাংকে তার সহকর্মীর কাছে দিয়ে চলে যান। পরদিন থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তবে ঘটনার পর লকারের কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি।‘
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখায় ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন নজরুল ইসলাম।
নজরুলের স্ত্রী মিসেস রুবিনা নজরুল জাগো নিউজকে বলেন, নজরুল গত ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা-পৌনে ৯টার দিকে বের হন। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইলের একটি সঙ্গে নিয়ে যান। তবে সেটিও রাতে বন্ধ হয়ে যায়।
‘এর আগেও তার মোবাইল প্রায়ই এমন বন্ধ পাওয়া যেতো। ওইদিন রাতে তিনি আর ফেরেননি। কয়েকবার কল দিয়ে নম্বর বন্ধ পাই। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি জানাই। তারাও কেউ খোঁজ দিতে পারেনি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর পুলিশ, র্যাব কেউই কোনো আপডেট দিতে পারেনি। অনেকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। স্বামীর শোকে একটি দিনও ভালো কাটছে না।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার পর আমরা অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে কথা বলেছি। ওনার দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো তথ্য আমরা পাইনি। তবে আমরা পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছিলাম, সেটির উত্তর এখনো পাইনি।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নজরুল ইসলাম নিখোঁজের ঘটনায় ২৬ এপ্রিল তার স্ত্রী বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করেছেন। নিখোঁজের আগের দিন লকারের চাবি ব্যাংকে দেওয়ার সময় বলেছিলেন, রোববার ব্যাংকে আসতে তার দেরি হবে, তাই চাবি রেখে যাচ্ছেন।
‘তিনি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বের হয়েছিলেন বলে প্রাধমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ নিজে যদি কোথাও চলে যায় তাকে খুঁজে বের করা মুশকিল। সঙ্গে তিনি মোবাইলও নেননি।‘
রুবিনা ও নজরুল দম্পতির দুই ছেলে। তাদের বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ছোট ছেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের ভগ্নিপতি।
টিটি/এমপি/