প্রেমিকাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা!
দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কত লোকের কত আবদার। সবাই কিছু না কিছু পেতে চায়। তাই এসব চাওয়া আর দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রী বোধকরি স্বাভাবিকভাবেই নেন। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বোধ করি আশ্চর্য হবেন প্রেমিক সালেহর চাওয়ার কথা শুনে। আর কিছু নয় প্রেমিকাকে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান এই প্রেমিক!
সোমবার দিনভর রাজধানীর পাঁচ তারকা সোনারগাঁও হোটেলের অদূরে সার্ক ফোয়ারার সামনে একটি কাগজের পোস্টার হাতে নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা সালেহ নামের এক যুবককে দেখে ব্যস্ততম সড়কে বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াতকারী অনেকেই অবাক হয়েছেন।
‘ফিরিয়ে দাও আমারই প্রেম...এভাবে চলে যেওনা ’ পংক্তিগুলো কানে এলেই পাঠকদের যেমন ৯০ এর দশকের অন্যতম ব্যান্ডসংগীত দল মাইলসের ভোকালিস্ট হামিম শাফিনের সেই জনপ্রিয় গানটির কথা মনে পড়ে যায়। সেই সময়কার তরুণ-তরুণীরা কনসার্টে গানটি শুরু হলেই সাথে সাথে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠতো। সালেহকে দেখে বোধকরি সে গানের কথাই মনে পড়েছে সবার।
প্রেমিকাকে ফিরে পাওয়ার আশায় এক তরুণ হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। পোস্টারে লেখা ছিল- ‘হে মহান প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক জানতে চাই কোন অপবাদে আমার উপর এই ডিজিটাল যুগে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরতা চালানো হচ্ছে। আপনি নিজ উদ্যোগে এর সমাধান না করবেন আমি বাসায়ও পিরবোনা (ফিরবোনা) আর এক ফোঁটা পানিও পান করবো না। হে দেশরত্ন দেশের আইন কি সব নারীর জন্য?’
বিকেল তখন সাড়ে ৩টা। সার্ক ফোয়ারার সামনে দিয়ে যারাই যাচ্ছিলেন তারাই একবার থমকে দাঁড়িয়ে পোস্টারটির লেখা ও সেই তরুণকে দেখছিলেন। অদূরে দাঁড়িয়ে যানবাহনের যানজট নিরসনে ব্যস্ত একাধিক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা ও ট্রাফিক কনস্টেবল। যুবককে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তাদের।
কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক এগিয়ে গেলে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি যুবক। সমস্যা কি বলতেই জানালেন, যা বলার প্রধানমন্ত্রীর কাছেই বলবেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিয়ে সমস্যা জানালে উপকৃত হতে পারেন বলতেই মুখ খুললেন।
জানালেন, তার নাম সালেহ আহমেদ। বাবার নাম দেলোয়ার হোসেন। কুমিল্লা কমিউনিকেটিভ কম্পিউটিং ফর নেক্সট জেনারেশন নামক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র তিনি। বাড়ি লাকসাম। কি সমস্যা নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি পরিবার আমাকে দুই বছর যাবত হয়রানি করছে। মানসম্মান, টাকা পয়সা, লেখাপড়া কেড়ে নিয়েছে।
তিনি জানান, ওই পরিবারে সুনয়না (ছদ্মনাম) নামের একটি মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়েছিল। মেয়েটি তাকে ভীষণ ভালোবাসতো, সেও মেয়েটিকে খুব ভালোবাসতো। মেয়েটির বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়ায়। সে লাকসামে এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে সে চট্টগ্রামে নানীর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সুনয়নার সঙ্গে দেখা করে।
সালেহর দাবি, মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা তাদের মেয়েকে তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে প্রথমে বাধা দেয়নি। বিভিন্ন সময় মেয়েটির মাধ্যমে অর্ধলাখ টাকাও নিয়েছে। এক পর্যায়ে তার (সালেহর) পরিবারে জানাজানি হলে বাবা-মা প্রথমে আপত্তি করে। এরপর যদিও মেনে নিয়ে মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। এর কিছুদিন আগে সুনয়নার জন্য একজন ইতালি প্রবাসী ছেলের বিয়ের প্রস্তাব আসে।
এর ফলে, সালেহর পরিবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলে মেয়ে পক্ষ সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এ কারণে সালেহর বাবা-মা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর তিনি সুনয়নার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন।
এদিকে মেয়ের বাবা-মা এখন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছে। কয়েকমাস আগে ওয়ারিতে দুঃসম্পর্কের এক ভাইয়ের বাসায় এসে আশ্রয় নেন সালেহ। পরে দুইমাস চাকরি করলেও তার মন সব সময় সুনয়নার কাছে পড়ে থাকায় চাকরি ছেড়ে দেন।
আবারো যোগাযোগের চেষ্টা করলে মেয়ের পরিবার হুমকি দিতে থাকে। এ কারণে রাস্তায় নেমেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই তিনি প্রেমিকাকে ফিরে পেতে চান। মেয়ে কি রাজি আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নিশ্চয়ই। এখন হয়তো পরিবারের চাপে পড়ে অস্বীকার করতে পারে।
কতক্ষণ এখানে (সার্ক ফোয়ারায়) অবস্থান করবেন জানতে চাইলে তার সাফ জবাব, প্রধানমন্ত্রী তার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত ফিরে যাবেন না।
এমইউ/এসএইচএস/এমএএস/আরআইপি