ঢাকা কলেজে থমথমে পরিস্থিতি, জরুরি বৈঠকে শিক্ষকরা
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টানা দুদিন দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার পর তৃতীয় দিন সকালে নতুন কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া না গেলেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা কলেজ এলাকায়৷
চলমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে বসেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক, আবাসিক হলসমূহের তত্ত্বাবধায়কসহ শিক্ষকরা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১টায় সরেজমিনে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরাফেরা করছেন। কেউ কেউ হলে অবস্থান করছেন৷ তবে কোথাও কোনো উত্তেজনা নেই।
এদিকে সকাল থেকে নিউমার্কেট এলাকায় যান চালাচলও স্বাভাবিক রয়েছে ৷ নিউমার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলো এখনো বন্ধ। মার্কেট খোলার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা নিউমার্কেট এলাকায় এসেছেন। নতুন করে যেন আর কোনো সংঘর্ষ তৈরি না হয়, সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ৷
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী হুমায়ুন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার করতে হবে ৷ ক্যাম্পাসে টিয়ারশেল, গুলি করা হয়েছে ৷ পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে৷ এ ঘটনার বিচার চাই ৷
নিউমার্কেটে দোকান খোলার বিষয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে, যদি এরকম থাকে সব দেখে আমরা মার্কেট খুলে দেবো। আমি ব্যবসায়ীদের বলেছি আজ দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। সাত কলেজের ছাত্ররা নাকি ঢাকা অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নুরুল হক নুররাও ওদের সঙ্গে শামিল। ইডেনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার কথা বলেছে; বুঝে হোক আর না বুঝে হোক।
দুই দোকানের কর্মীদের বিরোধের জেরে গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মধ্যরাতে দুপক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এরপর মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের পর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর নীলক্ষেত মোড়-সায়েন্সল্যাব এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার পরও ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেটসহ আশপাশ এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা যায়।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের টানা দুদিনের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ থাকার পর সড়কে স্বাভাবিকতা ফিরেছে। পরিস্থিতি অনেকাংশেই শিথিল হওয়ায় দোকান খোলার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার দিনভর নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার সব সড়ক অবরুদ্ধ থাকার পর বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে দেখা যায়। আগের দিন সন্ধ্যার পর ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল শুরু হলেও আজ সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছে গণপরিবহনসহ অন্য ভারি যানবাহন।
দুদিনের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১১ জন সাংবাদিক, ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ (১৮) নামের এক কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এদিকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১০টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সাত কলেজ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট।
নাহিদ হাসান/এমকেআর/জেআইএম