নিউমার্কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক, দোকান খোলার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের টানা দুদিনের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ থাকার পর সড়কে স্বাভাবিকতা ফিরেছে। পরিস্থিতি অনেকাংশেই শিথিল হওয়ায় দোকান খোলার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার দিনভর নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার সব সড়ক অবরুদ্ধ থাকার পর বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে দেখা যায়। আগের দিন সন্ধ্যার পর ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল শুরু হলেও আজ সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছে গণপরিবহনসহ অন্য ভারি যানবাহন।
ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ওইদিন সকাল ৬টা থেকে নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকার সব সড়ক বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে ৫টার দিকে কিছু যানবাহন রাস্তায় নামলেও মিনিট দশেকের মধ্যে আবারও সড়ক অবরোধ করা হয়।
এর আগে দফায় দফায় সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার পরই নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকায় দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে আটটার পর ইন্টারনেট সেবা চালুর নির্দেশনা দেওয়া হলে পৌনে নয়টা থেকে আবারও তা চালু হয়।
এদিকে, বুধবার সকালে সড়কে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে না পড়ায় নিউমার্কেটের দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় প্রতিটি মার্কেটের নিচে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের মৌসুমে পুরো একটা দিন দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সকালে সরেজমিনে ঢাকা কলেজের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটক বন্ধ। আশপাশে কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ দোকান খোলার উদ্দেশ্যে সকাল ৯টায় মার্কেটে এসেছেন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, ঈদের মৌসুম চলছে। এসময় মার্কেট না খুলতে পারলে বড় লোকসান হয়ে যাবে। আজ দোকান খোলার জন্য এসেছিলাম, কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত এলেই দোকান খুলবো।
হকার্স মার্কেটের দোকানি হাবিলদার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কখন দোকান খুলুম আর কখন বেচাকেনা করুম তা আল্লাহই জানে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ. ম. কাইয়ুম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীরা সবসময়ই দোকান খুলতে চায়। তবে তারা কখন দোকানপাট খুলতে পারবে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গতকালের মতো আজ যেন নতুন করে সংঘর্ষ না হয়, সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মধ্যরাতে দুপক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এরপর মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের পর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার পর নীলক্ষেত মোড়-সায়েন্সল্যাব এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার পরও ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেটসহ আশপাশ এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা যায়।
দুদিনের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১১ জন সাংবাদিক, ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ (১৮) নামের এক কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এদিকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ১০টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সাত কলেজ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট।
টিটি/এমকেআর/জেআইএম