বিমানবন্দরের স্ক্যানিংয়ে অধরা এলএসডি, ১৯ দিন পর ধরলো র্যাব
অডিও শুনুন
দীর্ঘ ৯ বছর পর গত ২২ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সপরিবারে দেশে ফেরেন মোহাম্মদ রায়হান (২৫)। দেশে ফেরার সময় ব্যাগের ভেতর একটি নোটবুকে অভিনব কায়দায় নিয়ে আসেন বিপুল পরিমাণ ভয়ংকর মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি)। ওইদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর স্ক্যানিংয়ে মাদকের এ চালান ধরা পড়েনি। পরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তিনি গ্রাহকদের কাছে এলএসডি বিক্রি শুরু করেন।
র্যাব বলছে, রায়হানের ব্যবসায়িক সব ধরনের কাজকর্ম পরিচালিত হতো হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। তার মোবাইলে পাওয়া হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টটিও দক্ষিণ আফ্রিকার নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করা। বাংলাদেশে তিনি অন্য একটি ফোনের হটস্পটের মাধ্যমে ইন্টারনেট দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এভাবেই অভিনব কৌশলে তিনি বিক্রি করে আসছিলেন ভয়ংকর মাদক এলএসডি।
ক্রেতা সেজে র্যাব এলএসডি কিনতে গিয়ে গতকাল শনিবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে গ্রেফতার করে মোহাম্মদ রায়হানকে (২৫)। এসময় তার কাছ থেকে এলএসডি মিশ্রিত ৯৬ পিস রঙ্গিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ, তিনটি ক্রেডিট কার্ড, দুটি ডেবিট কার্ড, একটি ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, একটি দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রাইভিং লাইসেন্স, একটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও একটি নোটবুক জব্দ করা হয়।
রোববার (১০ এপ্রিল) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, গ্রেফতার মোহাম্মদ রায়হান দক্ষিণ আফ্রিকায় ট্যাক্সি ড্রাইভার ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল। গত ২২ মার্চ সে দেশে আসে। সঙ্গে ব্যাগের ভেতর থাকা নোটবুকে অভিনব কায়দায় নিয়ে আসে এলএসডি। সে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসার পথে রায়হান এতোগুলো বিমানবন্দর কীভাবে পার হলো এবং বিমানবন্দরে কেন স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়লো না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর বলেন, হেরোইন-ইয়াবাসহ অন্যান্য যে মাদকগুলো রয়েছে সেগুলো ডিটেক্ট করার ক্ষেত্রে আমরা অভ্যস্ত। তবে এলএসডি মাদক ছোট স্টিকারের মতো একটি স্ট্রিপ। এগুলো যে ড্রাগ তা বুঝলে ডিটেক্ট করার মতো যেসব যন্ত্র তা দেশে আছে কি না জানা নেই।
কতদিন ধরে রায়হান এলএসডি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশে বসে রায়হান এলএসডি সংগ্রহ করে এবং একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেগুলো বাংলাদেশে পাঠায়। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যায় রায়হান। দীর্ঘদিন পর বিদেশ থেকে ফেরার সময় সে প্রায় ২০০টি এলএসডি ব্লট পেপার স্ট্রিপ সঙ্গে আনে। এরমধ্যে গত কিছুদিনে ১০৪টি বিক্রি করে। ৯৬টি এলএসডি ব্লট পেপার স্ট্রিপ আমরা উদ্ধার করেছি।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরও বলেন, রায়হানের পেছনে আরেকজনের নাম আমরা পেয়েছি। দীর্ঘ ৯ বছরের মধ্যে রায়হান দেশে আসেনি। আর এলএসডি মাদকটি এতো সহজে বহনযোগ্য যে, কেউ এ মাদকের বিষয়ে অভিজ্ঞ না হলে বুঝতেই পারবে না। দেখে মনে হবে এটি একটি স্টিকার। রায়হানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্ত শেষে জানা যাবে, কী পরিমাণ এলএসডি সে দেশে চালান করেছে।
দেশে এসে রায়হান দক্ষিণ আফ্রিকার নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে এলএসডি কারবার কীভাবে করতো, জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, সে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন তার মোবাইলের ওই দেশের নম্বর দিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলেন। দেশে এসে সেদেশের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে সে এলএসডি বিক্রি করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তার ওই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এলএসডি ক্রেতা সেজে আমরা তাকে গ্রেফতার করি।
টিটি/এমকেআর/জিকেএস