এক জমিতে বছরে চার ফসল!


প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

শেরপুর শহরের পশ্চিম শেরী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম। বাড়ির পাশের দেড় একর জমিতে এক বছরে পর্যায়ক্রমে তিনি ৪টি ফসলের আবাদ করতে পেরে দারুণ খুশি।

আউশ মৌসুমে চাষ করেছিলেন বিআর-৪৮ ধান। ১১০ দিনেই সেই ফসল ঘরে তুলেছিলেন একর প্রতি ৪৫ মণ করে। আউশ কেটে আমনে চাষ করেছিলেন বিআর-৬২ ধান। ১০০ দিনেই আমন ফসল কেটে ঘরে তুলেছিলেন। একর প্রতি ফলন মিলেছিলো ৫৫ মণ করে। আমন কেটে রবি মৌসুমের শুরুতেই সেই জমিতে রোপণ করেছিলেন বারি-১৪ সরিষা। মাত্র ৮২ দিনেই সেই সরিষা ঘরে তুলে এবার বোরো রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা সরিষা আবাদে খরচ হয়েছে। দেড় একরে সরিষার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৫ মণ। বাজারে বর্তমানে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি হচ্ছে। সরিষার এমন লাভ পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। এবার সরিষার লাভের টাকাতেই সেই জমিতে তিনি বিআর-২৮ ধান রোপণ করবেন। আগে থেকেই বীজতলা তৈরি করে রেখেছেন। এখন কেবল সরিষা তোলা জমিতে বোরো রোপণ করবেন।

১৪০-১৪৫ দিনেই বিআর-২৮ ধানের ফলন আসে। বাংলাদেশ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বারি) শেরপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষক রফিকুল ইসলামের জমিতে এভাবে এক জমিতে পর্যায়ক্রমে চারটি ফসল ফলানো সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া সবগুলো ফসল উচ্চ ফলনশীল জাতের হওয়ায় এসব ফসলের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এলাকার কৃষকরা একই জমিতে বছরে চার ফসল আবাদ হওয়ায় বিষয়টি দেখে বেশ আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বিষয়টি আমার বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু নিজের জমিতে বছরে চার ফসল করে এখন মনে হচ্ছে এটা অসম্ভব কিছু না। এতে উৎপাদন খরচ যেমন কম হয়েছে, তেমনি ফলনও ভালো হয়েছে।

পাশের জমির কৃষক মাহবুব আলী বলেন, রফিকুলের ক্ষেতের অবস্থা আমি সব সময় দেখেছি। দেখলাম আবাদের অবস্থা খুব ভালো। আগে তো কেবল বোরো আর আমন ধানই করতাম। এবার চিন্তা করছি, চলতি বোরো মৌসুম থেকে আমার ২ একর জমিতেও বছরে চার ফসল কিভাবে করা যায় সেই ব্যবস্থা নেবো।

Char-Fasal

শনিবার শহরের পশ্চিম শেরী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলামের চার ফসলভিত্তিক শস্য আবাদের সরিষা ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন বারি গাজীপুরের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল হাসান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহীদুজ্জামান, ড. এম আব্বাছ আলী, জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নারায়ণ চন্দ্র বসাক, শেরপুর সরেজমিন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সামছুর রহমান প্রমুখ। তারাও এ সরিষা ক্ষেত দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ উপলক্ষে ওই সরিষা ক্ষেতের পাশে আয়োজিত মাঠ দিবসে সদর উপজেলার শতাধিক কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বারি গাজীপুরের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, ফসল নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণে চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাস উদ্ভাবন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশের ১৫টি জেলায় এখন সরেজমিন গবেষণা কার্যক্রম চলছে। গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত খুব ভালো। আশা করি আগামী বছর থেকে এক জমিতে চার ফসল আবাদের এই কর্মসূচি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
 
বারি শেরপুরের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সামছুর রহমান বলেন, আমরা শেরপুরে যেভাবে চার ফসলের শস্য বিন্যাস করে আবাদ করেছি তাতে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৩৫ দিনেই চারটি ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছে। বিষয়টি খুবই আশা জাগানো। এতে শস্যের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণ সম্ভব হবে।

হাকিম বাবুল/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।