৫ লাখ টাকায় এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে রোগী দেখতেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০২২
গ্রেফতার ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসকরা

টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সার্টিফিকেট দিতেন মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২) নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামে নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খুলে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং সহ ১৪৪টি বিষয়ের সার্টিফিকেট দিতেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এমন শত শত ভুয়া চিকিৎসককে এমবিবিএস-বিডিএস সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বিনিময়ে প্রতিটি এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য হাতিয়েছেন পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

এমন অভিযোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও একজন সহযোগীসহ চারজন ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনাল টিম। বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

৫ লাখ টাকায় এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে রোগী দেখতেন তারা

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবি জানায়, গ্রেফতাররা মাদরাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাশ করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেন। দাখিল ও কামিল পাশে কোনোভাবেই এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সুসজ্জিত চেম্বার খুলে এসব চিকিৎসক রোগীও দেখতেন নিয়মিত।

৫ লাখ টাকায় এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে রোগী দেখতেন তারা

গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভিসি ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২), মো. মোয়াজ্জেম হোমেন (৫৮), ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ (৩৭), ডা. মো. আমান উল্লাহ (৩৮) ও দেবাশীষ কুন্ডু (৫২)।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড, নকল সিল যাতে VARIFIED AND FOUND CORRET PROFF DR SHAHARIER AHAMMED, VARIFIED AND FOUND CORRET PROFF DR M N HAQUE Chairman primer university of technology, PROFF DR sheikh nurul goni vice chancellor primer university of technology, it is found correct & o k prof. dr quiyum commander ইত্যাদি লেখা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, ভুয়া সনদ প্রদানের চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং ও লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, নব দিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারের কপি, একটি সিপিইউ ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়। ভুয়া সনদপত্র তৈরি ও ছাপার কাজে এসব ব্যবহার করা হতো।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, গ্রেফতার চক্রটি প্রায় দুই দশক ধরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রির ব্যবসা করে আসছিল। প্রতারণার কাজে তারা ভুয়া ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। তাদের কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাস যা বাস্তবে অস্তিত্বহীন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ ও হাইকোর্টের জাল রিট দেখাতেন। এমনকি প্রতারক চক্রের সদস্যদের রোগী দেখার চেম্বার অত্যাধুনিক উপায়ে সজ্জিত এবং নামফলক সম্বলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি উল্লেখসহ আকর্ষণীয়ভাবে প্রদর্শন করতেন।

এ চক্র এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং- এই ধরনের ১৪৪টি বিষয়ের ওপরে অসংখ্য সার্টিফিকেট প্রদান করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। বাস্তবে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কোনো অস্তিত্ব নেই। একইভাবে ডা. মো. নুরুল হক সরকার নিজেকে Pitch Blende university of Science and (PUST) এবং Peace Land university ইত্যাদি নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে পরিচয় দেন। ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, দেবাশীষ কুন্ডু, ডা. মো. আমান উল্ল্যাহ, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজসহ আরও অসংখ্য ব্যক্তিদেরকে ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্রসহ অন্যান্য অসংখ্য বিষয়ে ভুয়া সনদপত্র দিয়েছেন। এই প্রতারক নুরুল হক সরকার তার পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় ভুয়া সনদপত্র প্রদানের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। এই সংঘবদ্ধ চক্র কোনো রকম পরীক্ষা-ক্লাশ ও বৈধ অনুমোদন না নিয়েই টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১৪৪ ধরনের ভুয়া জাল সার্টিফিকেট তৈরি করতো। যা সংঘবদ্ধ চক্রটি তাদের বাসায় ও ভাড়া করা অফিসে বসে বিভিন্ন সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের আদলে কম্পিউটার প্রিন্ট করে সরবরাহ করে আসছিল। এর বিনিময়ে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভুয়া ভিসি হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

ডিবি প্রধান বলেন, ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, ডা. মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ ও ডা. মো. আমান উল্লাহ একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেন। দাখিল ও কামিল পাসে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সুসজ্জিত চেম্বার খুলে এসব চিকিৎসক রোগীও দেখতেন নিয়মিত।

প্রতারণার কৌশল জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সার্টিফিকেট প্রত্যাশীরা মোবাইলের মাধ্যমে সার্টিফিকেটের জন্য যোগযোগ করে এবং পার্সেলের মাধ্যমে ভুয়া সার্টিফিকেটগুলো পাঠানো হতো। এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার। এমবিবিএস ডিগ্রি দেওয়ার সঙ্গে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দিতেন, সেটিও ছিল ভুয়া। ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মালিক হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তার ইউনিভার্সিটিতে কতজন শিক্ষক রয়েছেন সেটিও তিনি ভুলে গেছেন বলে জানান। সম্পূর্ণটাই তার ভণ্ডামি।

এসব ভুয়া ডিগ্রি নিয়ে এই ভুয়া চিকিৎসকরা কোনো চাকরি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে দুজন আছেন চাকরিজীবী। সাভারে একজনের চেম্বার রয়েছে এবং ডায়াগনটিস্টিক চেম্বার রয়েছে।

টিটি/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।