‘জয় বাংলা’ স্লোগান: প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব পাস
‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস হয়েছে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খান কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ অনুযায়ী একটি সাধারণ প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন।
সংসদে এ প্রস্তাবের ওপর প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা চলে। এ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাস হয়। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার সময় সংসদের অধিবেশন কক্ষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন সংসদ সদস্যরা।
প্রায় দুই বছর আগে হাইকোর্টের এক রায়ে জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণের ওপর জোর দিয়ে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার আলোকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে ২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
শাজাহান খানের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণার যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন জাতির ছিল, তা পূরণ হওয়ায় বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদকে এ বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হোক।’
প্রস্তাব উত্থাপনকালে শাজাহান খান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জয় বাংলা স্লোগানকে বাঙালি জাতির অপরিহার্য স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগানকে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাদের রণধ্বনি ছিল জয় বাংলা। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান হিসেবে জয় বাংলা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। স্বাধীনতার পর জয় বাংলা স্লোগানকে বাঙালি জাতি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলদার মোশতাক-জিয়া গং জয় বাংলার পরিবর্তে পাকিস্তানি ভাবধারায় বাংলাদেশ জিন্দাবাদকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে, সাংবিধানিক পদাধিকারীরা, দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশে সমাপ্তির পর, সভা-সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা জয় বাংলা উচ্চারণ করবেন।’
প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, জয় বাংলা কোনো দলীয় স্লোগান না। এটা আমাদের জাতীয় স্লোগান। স্বাধীনতার পর জাতীয় জীবনে এ অর্জন ধরে রাখতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ স্লোগানের চেতনাকে ধরে রাখার আহ্বান জানান তারা।
প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিএনপির হারুনুর রশীদ, সংরক্ষিত আসনের সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান ও ফরিদা খানম।
তারা জয় বাংলা স্লোগানের ওপর যুক্তি উপস্থাপন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন।
এইচএস/এএএইচ/জেআইএম